ইউজার লগইন

নাগরিক গল্পঃ ১৬- বিষন্ন গলি এবং রাজপথ

Here on the slopes of hills, facing the dusk and the cannon of time
Close to the gardens of broken shadows,
We do what prisoners do,
And what the jobless do:
We cultivate hope.

-কবি মাহমুদ দারবিশ

ব্যস্ত ফার্মগেট নীরব! টংদোকানের চা দোকানীরাও ফিরেনি। এক কাপ চা খেতেও যেতে হয় অনেক দূরে। রিক্সা-সি এন জি কিংবা বাস অনেক কম। দুই একটা যাও চোখে পড়ে-চালকের চোখে চৈত্রের বিষন্নতা। সওয়ারী নেই। আধা ঘুমন্ত-আধা জাগরিত এই শহর কেমন যেনো অপরিচিত লাগে অরুপের! কি করা যায়? এতো তাড়া-তাড়ি ফেরা ঠিক হয় নাই। আরো কিছুদিন থেকে আসা যেতো মফস্বলে।আরো দুই একদিন হেলা-ফেলায় কাটিয়ে দেওয়া যেতো। পকেটে সেল ফোন ডেকে উঠেছে।
-তুমি কই মামু? আজাদের ফোন।
-আমি তো ঢাকা।
-কি কও?
-ঠিকি কইতাছি।
-না কইয়া চলে গেলা?
-সেল ফোনের যুগে বলে আসতে হবে? টিকেট তো তুমি দিলা; ভুলে গেলা এতো তাড়া-তাড়ি?
-তা ঠিক। তবুও একটু বিদায় দিতাম।
-আবার আসতেছি কিছুদিন পরেই!
-কবে?
-আগামি সপ্তাহের দিকে।
-আমি ঢাকা আসবো মন্ত্রনালয়ে কাজ আছে-তারপরে দুজনে একসাথে ফিরবো।

আজাদ ব্যস্ততার সাথে ফোন কেটে দিলো। জনপ্রতিনিধি। মহা ব্যস্ত মানুষ। অরুপ আবার হাঁটতে থাকে। অনিশ্চিত যাত্রা। মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে সামনে এগুতেই মহাজটলা। সংসদের ঠিক সামনে অনেক মানুষ। নারী-শিশু-তরুন-তরুনী; চাঁদের হাট। এই ঢাকা শহরে দিন দিন অবসরের জায়গা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে রমনা পার্ক-সংসদ ভবন আর চিড়িয়াখানা। এখন অবশ্য আশুলিয়াও বেড়ানোর জায়গা। কাপাসিয়াও চমতকার বেড়ানোর জায়গা। সংসদের ভীড়ের মাঝেই বসে পড়ে অরুপ। সুন্দর সন্ধায় চমতকার সব মানুষ।
-মামা ভালো আছেন? তাকায় অরুপ দেখে পিচ্চি রফিক মিয়া ময়লা দাঁত বের করে হাসছে। সংসদের সামনে পান-সিগারেট ফেরী করে।
-হ’ ভালো আছি রে!
-বাড়ী যান নাই?
-গেছিলাম-ফিরে আসছি!
-মামু তুই যাস নাই?
-না মামা ঈদের দিন বা ঈদের পরের দিন এখানে বেচা-বিক্রি ভালো; তাই থাইক্কা গেলাম। কয়দিন পরে যাইমু!
-দে একটা বিড়ি দে।
রফিক বসলো। বয়স ১০ থেকে ১২ হবে। খুব মায়াময় চোখ। অরুপ মাঝে মাঝে এদিকে আসে। কিভাবে যে রফিকের সাথে খাতির জমে গেছে টের পায় নাই অরুপ।
-রফিক মামু বস এখানে-বেচা-বিক্রি কেমন?
-আইজকা ভালো হইছে মামু-সকাল থেইক্কা দৌড়াইতেছি; এখন একটু বসি। বসলো রফিক পাশে।
-তোর বাড়ী কোথায়রে রফিক?
-ভুইল্লা গেলেন মামু-আগেও কইছি ধোবাঊড়া।
-ময়মনসিংহ ধোবাউড়া?
-বাড়ীত কে কে আছে রে?
-এইতো মা বাপ ভাই বোন সবাই।
-ভালো টাকা পাঠাস?
-না মামু মাঝে মাঝে পাডাই।
-সংসার কেমনে চলে?
-বাপ আছে গিরস্থি করে। আমিও টেকা দেই! ময়লা দাঁতে হাসি। অরুপ ভাবতে থাকে কি সুখী মানুষ রফিক। আর আমরা মধ্যবিত্তরা; কিছুতেই সুখ নাই। বড়লোকদের অবস্থা আরো খারাপ। অনেকে আবার ঈদ করতে চলে গেছে বিদেশে। আজব দেশ-আজব ভাবনা। অরুপের বড়লোক হতে অনিচ্ছার এ হলো অন্যতম কারন। ইচ্ছে থাকলেও বড় লোক হওয়া অনেক কঠিন। বড়লোকদের জীবন অনেক জটিল হয়।

আবার হাঁটতে থাকে অরুপ। মীরপুর রোড ধরে ফুটুওভার ব্রীজের পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকে। সোবহানবাগের দিকে! কয়েকজন নিশি-নারী ফ্লাইওভারের নীচে একটু আবছা অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে! অরুপ পাশ কাটিয়ে যাবার সময় কিছুটা উতসুক দৃষ্টিতে দেখে আবার সড়কপানে।
-অরুপ তুমি কই? কংকনা ফোনে।
-মীরপুর রোড।
-কই যাও?
-পান্থপথ ধরে হেঁটে হেঁটে বকুলবাড়িতে যাবো।
-বাড়ি থেকে ফিরলা কবে?
-গতকাল।
-এতো তাড়া-তাড়ি?
-কিছু কাজ ছিলো-না আসলেও পারতাম। যে কারনে আসলাম তা আবার পিছিয়েছে কয়েকদিন।
-আহা! কয়েকদিন থেকে আসতে।
-তা ঠিক; আগে বুঝিনি। ঢাকা একদম নিথর-নীরব।
-কি বলো? জ্যাম নেই?
-আরে না মানূষ নেই-জ্যাম কোত্থেকে আসবে?
-আহা রিক্সা দিয়ে ঘোরা যেতো?
-তা যেতো। তুমি থাকলে!
-শুনেছি ঢাকায় আজকাল সব রোডে রিক্সা চলেনা!
-তা চলেনা; তবে হরতাল কিংবা এমন ঈদের ছুটিতে সবরোডেই রিক্সা চলে!
-হা তাহলে তো আরামেই আছো!
-আরে না বিরক্ত লাগছে-এমন নির্জন ঢাকা ভালো লাগছেনা।
-বিষন্ন হয়ে আছো?
-কিছুটা!
-তাহলে শুনো ঝট-পট কয়েকটা কবিতা লিখে ফেলো।
-কি কবিতা?
-আরে তাও আমি বলে দেবো?
-বলে দাও!
-ঠিক আছে; আমার চোখ নিয়ে-দাঁত নিয়ে-ভ্রু নিয়ে-ঠোঁট নিয়ে-হাত নিয়ে- পা নিয়ে লেখো!
-আর কিছু নিয়ে লিখবোনা?
-এই শয়তান বাদরামী করবানা; আমি যা বলেছি ঠিক সেভাবেই লিখবে।
-ঠিক আছে লিখবো।
-বিষন্ন মনে কবিতা লিখলে সে কবিতা সুন্দর হয়।
-তাই নাকি?
-হু আমি জানিতো।

খুট করে ফোন কেটে গেলো। কংকনা এমনি!কিছু জিজ্ঞেস করাও হলোনা।কেমন আছে কংকনা? অরুপ সময় মেলানোর চেষ্টা করে ইউরোপ-প্যারিসের সময় আর বাংলাদেশের সময়! বিষন্নতা কি এশিয়া পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছে গেছে।

বিষন্ন সন্ধ্যে অদ্ভুত!
বিষন্ন সড়ক!
বিষন্ন দোকান-পাট।
বিষন্ন সড়কবাতি।
বিষন্ন যানবাহন।
বিষন্ন বকুলবাড়ী!

তারিখঃ ২৩ আগষ্ট ২০১২

পোস্টটি ১১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

সবুজ পাহাড়ের রাজা's picture


লেখায় দু'একটি টাইপো আছে।
এছাড়া লিখা দারুন হয়েছে।

অনিমেষ রহমান's picture


ধন্যবাদ!!

জটিল বাক্য's picture


'মীরপুর রোড ধরে ফ্লাইওভারের পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকে। সোবহানবাগের দিকে! '

এটা কোথায় পেলেন ভাইজান।

নাগরিক গল্প ভালো হয়েছে।

অনিমেষ রহমান's picture


ফুটওভারব্রীজ হবে। সাইজ কইরা দিলাম গুরু!
আছেন কেমুন?
Smile

জটিল বাক্য's picture


Smile Smile Smile Smile
ভালো লেগেছে।

অনিমেষ রহমান's picture


ধন্যবাদ!!

মীর's picture


ভালো লাগলো। কেমন একটা মায়াভরা বিষণ্নতা ছড়ানো-ছিটানো।
অনেকদিন পর আপনার গল্প পেলাম অনিমেষ ভাই। আরো ঘন ঘন এরকম চাই।

অনিমেষ রহমান's picture


গুরু আছেন কেমুন?
একটু বিজি আছি; নিয়মিত হবো ইনশাল্লাহ।
আপনার লেখা পড়ছি।
Smile Smile

আরাফাত শান্ত's picture


নাগরিক গল্পের চরিত্র গুলা চেনা পরিচিত লাগে কিন্ত এরকম গল্প শুধু আপনি পারেন লিখতে!

১০

অনিমেষ রহমান's picture


ধন্যবাদ!!

১১

রন's picture


চমৎকার! কংকনার সাথে আলাপচারিতার পার্ট তা বেশি ভাল্লাগসে!

১২

অনিমেষ রহমান's picture


ধন্যবাদ!!
Smile

১৩

কবি নীরব's picture


বিষন্ন সন্ধ্যে অদ্ভুত!
বিষন্ন সড়ক!
বিষন্ন দোকান-পাট।
বিষন্ন সড়কবাতি।
বিষন্ন যানবাহন।
বিষন্ন বকুলবাড়ী!

এটার কথাই ঐদিন বলেছিলেন অনিদা।

নাগরিকগল্প ভালা পাইলাম, তয় কিছুটা বিষন্নতা ভর করলো Sad

ভাল থাকুন সতত Smile

১৪

অনিমেষ রহমান's picture


ধন্যবাদ নীরব কবি ভাই!!

১৫

নিভৃত স্বপ্নচারী's picture


ভাল লাগলো বিষণ্ণ ঢাকার গল্প।
Smile Smile Smile Smile

১৬

অনিমেষ রহমান's picture


থ্যাঙ্কু ভাইজান।

১৭

তানবীরা's picture


দারুন কাব্যিক আর রোমানটিক Big smile

১৮

অনিমেষ রহমান's picture


আপনে আছেন কেমুন?
সাথে থাকার লাইগ্যা ধইন্না।

১৯

বিষণ্ণ বাউন্ডুলে's picture


ভাল্লাগছে।

আপ্নের লেখা আরেকটু নিয়মিত পাইলে ভাল লাগবে আরো।

২০

অনিমেষ রহমান's picture


আছি ভাই অনিয়মিতের মাঝে নিয়মিত হইতাছি।

২১

জ্যোতি's picture


বিষন্ন রোমান্টিক। Smile ভালো লেগেছে।

২২

অনিমেষ রহমান's picture


Smile Smile Smile Smile

২৩

প্রিয়'s picture


নাগরিক গল্প ভালো লাগলো।

২৪

অনিমেষ রহমান's picture


ধন্যবাদ!!
Smile Smile

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

অনিমেষ রহমান's picture

নিজের সম্পর্কে

শুধু-শুধু লিখি !!