ইউজার লগইন

ঘুরাঘুরি ব্লগ: ২০ টাকা সাশ্রয়ীদের কথা ও আমার গাইবান্ধা সফর

১.
গাইবান্ধায় আমার প্রথম পা রাখাটা বেশ নাটকীয় বলা যায়। গাইবান্ধায় আমাদের জেলা প্রতিনিধি তোতা ভাই অল্পক্ষণ পর পরই ফোন করছিলেন। আধঘন্টা ধরে তোতা ভাই বসে আছেন বাস স্টান্ডে। কিন্তু নামে গেটলক হলেও থেমে থেমে যায় বাস। ফলে এক ঘন্টার রাস্তা আসতে লেগে যায় ২ ঘন্টার বেশি।
বাস থেকে নামতেই দেখি একা তোতা ভাই না, সঙ্গে ছোট খাট একটা দল। কিছু বুঝে উঠার আগেই এক বালিকা একটা ফুলের তোড়া আমার হাতে দিয়ে হরবর করে কি যেন বললো। মুখস্ত সম্ভবত ভাল হয়নি, ফলে নতুন করে আবার বলতে হলো তাকে। এবার বুঝলাম যে আমার আগমনে তারা বেশ খানিকটা কৃতার্থ এবং খুশী। নাটকীয় মুহূর্ত এখানেই শেষ না, এর পর শুরু হল ফটো সেশন। ফলে আবার ফুল হাতে নিচ্ছি এরকম ভঙ্গিমা করতে হল, ফটো তোলা অনেকগুলো।
আমার সহযাত্রী যারা এতক্ষন আমার দিকে ফিরেও তাকাবার প্রয়োজন বোধ করেননি, তারা বেশ আগ্রহ নিয়ে আমাকে দেখতে লাগলো। কিন্তু আমি কোথাকার কোন হরিদাশ পাল সেটা বিুঝতে না পেরে সম্ভবত আর কেউ অটোগ্রাফ নিতে আসলো না।
২.
আমার পায়ের নিচে শর্ষে নাই। আমার প্রিয় সখের মধ্যে ঘুরাঘুরি মনে হয় পরে না। তারপরেও কিভাবে কিভাবে যেন ১২/১৩ টা দেশ ঘোরা হয়ে গেছে। দেশেও ঘুরাঘুরি কম হয় নাই। বিশেষ করে দুই নির্বাচনের সময় খবর সংগ্রহ করতে শেষ হাসিনার সফর সঙ্গী হয়ে আমার দেশের প্রায় অর্ধেক ঐ সময়ই দেখা হয়ে যায়। তারপরেও রংপুর ও গাইবান্ধা আমার আসা হয়নি। তাই এবার জিপিএ-৫ সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানের জন্য এই এলাকাই বেছে নিলাম।
৩.
কাজ শেষ করে মটরসাইকেলের পিছনে বসে গেলাম বালাসী ঘাট। বিশাল ব্রক্ষ্মপুত্রের তীরেই গাইবান্ধা।যাওয়ার রাস্তাটা বেশ ভালই। তোতা ভাই জানালো আরেকটু বেশি ভিতরে গিয়ে নদীর তীরের যে গ্রাম সেগুলো দেখে যেতে। কারণ এক বছর পর আসলে সেই গ্রাম আর খুঁজে পাওয়া যায় না।নদী ভাঙ্গন এই এলাকার বড় সমস্যা।নদী ক্রমাগত ভাঙ্গছে আর মানুষগুলো নি:শ্ব হচ্ছে।এই সব মানুষ আশ্রয় নেয় জেগে ওঠা চরে।
বালাসীতে দাঁড়ালেই দেখা যায় ছোট্ট একটা চর। এটি অস্থায়ী, বছর দুই হয়তো পানির উপর থাকবে। এই চরে যারা আশ্রয় নিয়েছে তারা চলে যাবে আরেকচরে। নদীর তীরে পাওয়া গেল অনেকগুলো বড় নৌকা, ইঞ্জিনচালিত। একেকটি চরের জন্য একেকটি নৌকা। রীতিমত বাস সার্ভিসের মতো।
মোল্লার চরে যেতে লাগে সাড়ে তিন ঘন্টা। এখানে ১০/১২ হাজার মানুষ থাকে। এখানে বিদ্যুত নেই, মানুষগুলো অতি দরিদ্র। থাকার কোনো জায়গা নেই, তাই এখানে থাকা। একজন ডাক্তারও নাই। প্রযুক্তি বলতে মোবাইল ফোন। দুই তিন জন মোবাইল ফোনের ব্যবসা আছে। তাদের আবার মাইক সার্ভিস রাখতে হয়। শহর থেকে কেউ ফো্ন আসলে মাইকে বলতে হয়। মানুষজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে আনতে হয়।
৪.
চরের মানুষদের জন্য অনেকগুলো এনজিও কাজ করে। তারপরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে হয়েছে বলা যাবে না। চরে আজকাল ভুট্টা ও বাদাম চাষ হয়। পোল্ট্রি হওয়ায় ভুট্টার বেশ চাহিদা আছে। তবে গাইবান্ধার স্থানীয়রাই বললেন, চরের মানুষগুলো আসলে নতুন কিছু করতে চান না। হাতে একটু অর্থ আসলেই আর নাকি কাজ করতে চান না।নৌকায় করে পুরুষরা শহরে আসে, দিনমজুরের কাজ করে আবার সন্ধায় ফিরে যায় নৌকায় করে চরে। আরেকটা গ্রুপ চলে আসে ঢাকায়, কাজের সন্ধানে।
৫.
ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলাম যে গাইবান্ধায় ঘুরাঘুরি করি। অস্ট্রেলিয়া থেকে মাহবুব সুমন লিখলো রসমঞ্জুরি খেয়ে আসবেন। গেলাম বিকেলে থেতে। রসমালাই, তবে আরেকটু উন্নত মানের। দুধটা নাকি পাঁচ ঘন্টা জ্বাল দিতে হয়। সঙ্গে থাকা মোস্তফা ভাই আইনজীবি মানুষ, বললেন সেই আগের মতো আর নাই। স্বাদ নষ্ট হয়ে গেছে। একটা দোকানেই পাওয়া যায়। দোকানটার নাম রমেশ মিষ্টান্ন। কেন আগের মতো নেই? কানের কাছে মুখটা এনে ফিসফিস করে বললেন, মালিক বদল হয়েছে। আগের মালিক ব্যবসা বিক্রি করে দিয়ে ইন্ডিয়া চলে গেছেন।
৬.
এখন রাত ১১টা। পলাশবাড়িতে আগমনী বাস কাউন্টারে বসে আছি। বাস আসবে রাত সাড়ে ১২ টায়, রংপুর থেকে। গাইবান্ধা থেকে কোনো এসি গাড়ি যায় না। তাই ২০ কিলোমিটার দূরে এসে উঠতে হবে গাড়িতে। এসেছি সাড়ে ৯ টায়। অতো রাতে নাকি আসা নিরাপদ না।
আমার আয়েশী শরীর ননএসি বাসে আসতে মন চাইলো না। তবে এই এলাকায় বাস আছে প্রচুর। এসিতে আসলে ভাড়া সাড়ে চারশ থেকে সাড়ে পাঁচশ টাকা। অন্য বাসে এলে ২শ টাকা। তবে আরেকটা ব্যবস্থা আছে।
ভিতরে পুরোটা রাস্তা দাঁড়িয়ে গেলে ভাড়া ৭০ টাকা, আর বাসের উপরে বসে গেলে ৫০ টাকা। এই দুই ব্যবস্থার মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা। বেশিরভাগই যেতে চান বাসের উপরে। ঝুঁকির এই ঢাকা যাত্রা মাঝে মধ্যেই বিপদ ডেকে আনে।
তারপরেও জীবনের মূল্যের চেয়েও ২০ টাকা সাশ্রয় এই এলাকার অতি দরিদ্র্ মানুষগুলোর জন্য বেশি প্রয়োজনীয়।

পোস্টটি ১১ জন ব্লগার পছন্দ করেছেন

ভাস্কর's picture


গাইবান্ধার চর এলাকায় যাওনের সৌভাগ্য হয় নাই আমার, কিন্তু সুন্দরগঞ্জ পর্যন্ত গেছিলাম দুইবার। তয় একটা মূল ভূমির সাথে যূক্ত এলাকাতেও দারিদ্রের এমন রূপ দেইখা আমি ভরকাইয়া গেছিলাম...

শওকত মাসুম's picture


চর এলাকায় একবার যেতে হবে। খালি পড়ি তাদের কথা, নিজ চোখে দেখা হয় নাই। মুল ভূমির মানুষের দরিদ্রতা যদি এরকম হয়, চরের মানুষ কিভাবে টিকে থাকে?

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


একবার টাঙ্গাইল থেকে নাটোর যাবার পথে সীট পাই নাই। বাসে উঠার আগেই কন্ডাকটরের সাথে তর্কাতর্কি শেষে সীট পাব এই শর্তেবাসে উঠলাম। পরে অবাক হলাম...এক বয়স্ক দরিদ্র লোককে উঠায় দিয়ে বনেটের উপর আমাদের সীট এর ব্যবস্থা করেছিল কণ্ডাকটর।

শওকত মাসুম's picture


ঐখানে বাসে দেখলাম যারা গরীব তারা সিটে বসে না। সিটে বসলে বেশি ভাড়া।গেট লক টাইপ সার্ভিসে এই ব্যবস্থা। গেট লক নামেই থামে সব জায়গায়। বসলে এক ভাড়া, দাঁড়ালে কম ভাড়া। তাই দেখলাম সিট খালি থাকলেও তারা বসে না।

আতিয়া বিলকিস মিতু's picture


ভালো লাগলো.!

শওকত মাসুম's picture


ধন্যবাদ পড়ার জন্য

মাহবুব সুমন's picture


মানুষ যে কি গরিব সেটা কাছে না গেলে বোঝা যায় না Sad ১০৫ টাকা দিয়ে এক প্যাক বেনসেন কিনা আমার কাছে ব্যপার না হলেও ১০৫ টাকা সেই চরের মানুষগুলোর কাছে বিশাল টাকা। জীবনের আধেক অংশ দেশের সেই অংশেইতো কাটলো আমার। কি ভয়াবহ দারিদ্রতা যা গ্রামের সাথে সম্পর্কহীন শহুড়ে মধ্যবিত্ত বুঝবেই না।

গাইবান্ধায় ছোট বেলায় ছিলাম বাবাব সাথে।

শওকত মাসুম's picture


আসলেই দরিদ্র্তা কি বয়াবহ হতে পারে এটা আসলে আমরা কখনো্ই বুঝবো না।

মীর's picture


মাসুম ভাই, আরো বড় এরকম লেখা চাই। এত পিচ্চি ভালো লাগে না। শুরু করার আগেই শেষ হয়ে যায়।

১০

শওকত মাসুম's picture


আমি মুদির দোকান টাইপ একটা ছোট্ট ঘরে বসে এটা লিখেছি। এটা নাকি বাস কোম্পানির কাউন্টার। আবার নেটবুক বের করে লিখছি, ভয় ভয়ও করছিল। তাই লেখা ছোট হয়ে গেল। ভেবেছিলাম বড়ই লিখবো। হলো না।

১১

সামছা আকিদা জাহান's picture


গাইবান্ধায় আছে আমাদের দেশের সবচেয়ে বেশি ধর্ণাঢ্য মানুষ তেমনি আছে সবচেয়ে বেশি হত দরিদ্র মানুষ। এখানে মানুষের অর্থনৈতিক বৈষম্য চোখে পরার মত। এই বিশ টাকার মূল্য ওদের কাছে অনেক আর একটা কথা তা হচ্ছে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধ্‌ নীলফামারীর মানুষ একটু কুঞ্জুসও বটে।

১২

শওকত মাসুম's picture


আসলে এরা এতোই দরিদ্র যে ২০ টাকাই অনেক টাকা তাদের জন্য।

১৩

মুকুল's picture


বছর চারেক আগে গিয়েছিলাম গাইবান্ধা। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাইতানতলায় শিবরাম আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। একটা প্রাইমারি স্কুল এত বড় প্রতিষ্ঠান হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম স্যারের প্রচেষ্টায় সামান্য প্রাথমিক বিদ্যায়ল থেকে এটা কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। কী নেই সে স্কুলে! ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধা.... ওখানে গেলে তব্ধা খেতে হয় সবাইকে।
শুধুমাত্র সততা, আন্তরিকতা, স্বপ্ন দিয়ে দরিদ্র এলাকার একটা স্কুলকেও যে দেশের মধ্যে অনন্য আদর্শ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব, তা নুরুল আলম স্যার করে দেখিয়েছে। যদি কখনো সুযোগ হয়, একবার দেখে আসবেন।

রসমঞ্জুরী খেয়েছিলাম। Smile

১৪

শওকত মাসুম's picture


একজন ব্যক্তি অনেক সময় বড় পরিবর্তন নিয়ে আসে। আর এধরণের কিছু মানুষ আছে বলেই দেশটি টিকে আছে।

১৫

নুশেরা's picture


মাসুমভাইর কাছ থেকে এ ধরণের লেখা বেশী বেশী আশা করি। আপনাকে যেন জিপিএ৫ এর অনুষ্ঠানে ঘন ঘন ঢাকার বাইরে পাঠানো হয় Smile

বালাসী ঘাটের দিকে যাওয়া হয়েছিলো কয়েক বছর আগে, ঘন্টা দেড়েক রিকশায় ঘোরাঘুরির পর রিকশাচালক পাওনা হিসেবে পাঁচটাকা চেয়ে, পারলে দুইএকটাকা বেশী দেয়ার সলজ্জ আবদার করেছিলো। সাধারণ মানুষ কতো সহজসরল হতে পারে, উত্তরবঙ্গে না গেলে জানা হতো না। গ্রামের পথে একজন জানতে চেয়েছিলো আমাদের বেতন কতো। তখন সরকারী স্কেল অতি দরিদ্র পর্যায়ে, তারও প্রায় অর্ধেক অঙ্ক বলার পরও বিপুল বিস্ময়ে মানুষটি জানতে চেয়েছিলো এতো টাকা দিয়ে কী করি!

১৬

শওকত মাসুম's picture


ঢাকায় আমার বাসার সামনে এক লোক তরকারি নিয়ে বসে। একদিন দাম দর না করেই মটরশুটি কিনেছিলাম। সে পরে আমার বউয়ের কাছে জানতে চাইছে আমার বেতন কি অনেক বেশি? তারপর নিজেই সংখ্যা ঠিক করে জানতে চাইলো ১০ হাজার টাকা পাই কিনা।

১৭

বকলম's picture


মাসুম ভাই তার লেখায় প্রায় চট্টগ্রামের প্রসঙ্গ আনেন তীর্যক ভাবে। আমার তেমন কোন জেলা বিদ্বেষ না থাকলেও উত্তর বঙ্গ বিশেষত গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুরের মানুষের সম্পর্কে একটা অবজার্ভেশন হল, অভাবের কারনে এদের স্বভাবে একটা কানিংনেস বা ধূর্ততা কাজ করে, "অভাবে স্বভাব নষ্ট" যাকে বলে। তবে ঐ অঞ্চলে প্রচুর উচ্চশিক্ষিত এবং ধনী লোকও আছেন, কিন্তু দেখা যায় তাদের ভাই হয়তো গ্রামেই হত দরিদ্র জীবন কাটাচ্ছেন। তারা ধনী হলেও তাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের ভাগ্য পরিবর্তনে উদ্যোগী হন না, যেটা বৃহত্তর চট্টগ্রাম বা বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষের মধ্যে দেখা যায়।

এটা শুধুই একটা অবজার্ভেশন, এটা ভুলও হতে পারে, এর ব্যতিক্রমও থাকতে পারে।

১৮

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


আমার মতে পুরাপুরি ভুল অবজার্ভেশন। যুক্তি উল্টা দিকে।

বর্তমানের একটা বাস্তব উদাহরণ ধরেন, কক্সবাজার ট্যুরিস্ট স্পট, প্রচুর পয়সা। ধরেন, ঐখানে থাকে শুধু চাকমা। কিন্তু তারা সংখ্যায় কম কিংবা বুদ্ধি-বিদ্যা না থাকায় ব্যবসা এক্সপান্ড করতে পারতাছে না। ব্যবসা করতে আসবে কে? সেটেলার বাঙ্গালি...শুধু সেটেলার বাঙ্গালি বললে ভুল হয়...বাঙ্গালিদের মধ্যে সবচাইতে ধূর্তরা সবার আগে আসবে। একই ঘটনা ঘটতাছে রাঙ্গামাটিতে, দরিদ্র কিংবা একটু কম-উন্নত এলাকায় অনেক আছে উপজাতীয় লোকজন, কিন্তু ট্যুরিস্ট স্পট ভরা বাঙ্গালি ব্যবসায়ী দিয়ে, উপজাতীয়রা বেল পায় না।

আমাদের চাঁদপুরে চরে যাদের বাড়ি, তাদের চৌরা বলে। এদের একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য ধরা হয়, তারা গোলমেলে প্রকৃতির। চরে সহজ-সরল লোক তো আর জায়গা ধরে রাখতে পারে না! সুতরাং, জেনারেশন থেকে জেনারেশনে কিছুমাত্রায় জেনেটিকাল বৈশিষ্ট্য থাকবেই(সরলীকরণ কিছুটা)। চাঁদপুরে বিয়ের ছেলে/মেয়ে দেখার সময় আরেকটা প্রবণতা আছে, কেউই নিজের বাড়ির দক্ষিণ দিকে বিয়ে দিতে চায় না। দক্ষিণ দিকের ওজন একটু কম...কারণ সেই পুরানো...
সহজ উদাহরণও আছে...কোথায় ফটকা বেশি পাওয়া যাবে মনে হয়ঃ ঢাকা নাকি কোনো গণ্ডগ্রামে? অবভিয়াসলি ঢাকাতে! মধু যে এইখানে!

আমাদের দেশের দক্ষিণাঞ্চল সবসময়ই উর্বর ছিল, সুতরাং সেখানে গিয়ে চাষবাস কিংবা অন্য ব্যবসা ধরতে যারা গেছিল, তাদের বেশিরভাগই ধূর্ত(ধনাত্মক উপমা হিসাবে চালাক বলতে পারেন) ছিল। সুতরাং জেনেটিকালি এই অঞ্চলের মানুষ চালাক প্রকৃতির। উত্তরবঙ্গে ছিল বঞ্চিতরা, একটু রুক্ষভাবে বললে বলদরা। জেনেটিকালি বর্তমানেও তারা একটু সহজ-সরল।

আমার রংপুরের এক বন্ধু আরো একটা কারণ দেয়। উত্তরবঙ্গে আয়োডিনের অভাব, গলগন্ডের সাথে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতাও তাই দীর্ঘদিন থেকে জেনেটিকালি তাদের মধ্যে।

১৯

অদ্রোহ's picture


মোদ্দা কথা সেটাই,মধু যেখানে সেখানে মাছি খানিক ঘুরঘুর করবেই,সেটাই স্বাভাবিক। তবে এই দুধের মাছিদের ঐ অঞ্চলের মানুষদের সাথে এক পাল্লায় মাপাটা একটু বেশি সরলীকরণ হয়ে যাবে বলে মনে হয়।

আমরা হরবখত কোন বিশেষ অঞ্চলের মানুষদের সাথে বিভিন্ন তকমা এঁটে দেই,যেগুলোর আবার প্রায় সবই মোটামুটি অপমানসূচক। এভাবে মোটা দাগে কথা বলার অভ্যাস আমাদের অনেকটাই মজ্জাগত হয়ে পড়েছে। আমার মতে,সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের সব জায়গাতেই সংগ্রাম করতে হয়। আর তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিতান্ত মাটির মানুষ। আর জনপ্রিয় ও রমরমা ট্যুরিস্ট স্পটগুলোতে কিছু ভুঁইফোড় লোকের কারণে আমরা ওই এলাকার মানুষদের সম্পর্কে কটু কথা বলে বসি। সাধারণ মানুষদের সাথে আমাদের সংশ্রব থাকেনা,বা থাকার সুযোগ মেলেনা বলেই এমনটা হয়।

২০

ভাঙ্গা পেন্সিল's picture


মোদ্দা কথা সেটাই,মধু যেখানে সেখানে মাছি খানিক ঘুরঘুর করবেই,সেটাই স্বাভাবিক। তবে এই দুধের মাছিদের ঐ অঞ্চলের মানুষদের সাথে এক পাল্লায় মাপাটা একটু বেশি সরলীকরণ হয়ে যাবে বলে মনে হয়।

ট্যুরিস্ট স্পট কথাটা শুধু মধু কি সেটা বুঝাতেই বলা। আর পুরো ব্যাপারটা যে অতি মাত্রায় সরলীকরণ তা সত্যি...মানুষকে কোনো সংজ্ঞায় পুরোপুরি আঁটানো যাবে না। দক্ষিণে সব শয়তান না, উত্তরেও সব ফেরেশতা না। তবে বিবর্তনের প্রভাব থেকে যাবেই।

২১

শওকত মাসুম's picture


তীর্ষক না, ফান করি বলতে পারেন।
আর এলাকা অনুযায়ী কিছু মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হতে পারে।
আর ধূর্ত হলে গরীব হতে হয় না, বহু টাকা ওয়ালা লোকরে চরম ধূর্ত হইতেও দেখছি। আর কোনো কিছুই জেনেরাইলজড করা হয়তো যায় না।

২২

জ্যোতি's picture


লেখা ব্যাপক সুস্বাদু মনে হলো।
মাসুম ভাই, রসমঞ্জরী খালি খাইলেন? আনেন নাই? খাইতাম চাই।
উত্তরবঙ্গের মানুষের এত দুর্দশার কথা পত্রিকায় পড়েছি, নিউজ এ দেখেছি, এক বন্ধু আছে রংপুর বাড়ী---ওর কাছে অনেক শুনেছি । ভাবলেই খারাপ লাগে মানুষের জীবন ক-ত কষ্টের হয়। একটা নির্দিষ্ট মাথাগোঁজার ঠাঁইও তারা পায় না।

২৩

পান্থ রহমান রেজা's picture


ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়া আসা পথে বাসের ছাদে করে এদের আসতে দেখি। ছাদে গাদাগাদি করে বসা। যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে! বাসের ছাদে এমন করে চলতে দেখে নিজেরই ভয় লাগে। কিন্তু এই দরিদ্র মানুষরা বাধ্য হয়েই ছাদে উঠে!

২৪

শাওন৩৫০৪'s picture


হুমম, উত্তর বঙ্গের বিষয়ে অনেক শুনা হয়, কিন্তু আজকে আবারো মনে হৈলো, নিজে না দেখলে কিছুই বুঝবো না আসলে--
লেখাটা অসাধারন ভাই।

২৫

আনিসুজ্জামান উজ্জল's picture


DSC_3993.JPG

২৬

সাঈদ's picture


দারুন । আপনি তো নেতা হয়ে গেছেন গাইবান্ধায় যাইয়া।

ঐ অঞ্চলের চরাঞ্চলের লোকদের কষ্টের কথা শুনেছি আগে, একবার নিজ চোখে দেখার ইচ্ছা।

২৭

রন্টি চৌধুরী's picture


বলার কিছুই নাই। কোনদিন উত্তরবঙ্গ দেখা হয় নি। সেখানকার সমস্যাগ্রস্থ মানুষদের দু:খও তাই ছুয়ে যায় না। মাহবুব সুমন ভাই এর কথাটা নির্মম সত্যের মতই।

২৮

নিয়তি's picture


গ্রামে না গেলে কখনোই মানুষের দারিদ্রতা বোঝা যায়না..................ভালো লিখেছেন আপনি।

২৯

মীর's picture


হাফসেঞ্চুরি। বস্ ব্যাটটা একটু উঁচান। Applause

৩০

শাপলা's picture


কাজের সূত্রে গাইবান্ধা ছিলাম, মাসখানেক। মোল্লার চর গিয়েছিলাম। মানে কয়েকটা ইউনিয়ন কাভার করেছিলাম, তার মধ্যে মোল্লার চর ছিল। আমাদের কার্যক্রম ছিল- বাল্যবিবাহ নিরোধ এর উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া। সম্ভবতঃ ইউনিয়নটা মোল্লার চরই হবে। আমরা শ্যালো-নৌকায় যাচ্ছি প্রশিক্ষণ দিতে- হঠাত অন্য গ্রাম থেকে এক লোক গলা পানিতে নেমে, এক একটা নৌকা থামানোর চেষ্টা করছেন- দূরে ডাঙগায় দাঁড়িয়ে আছে, এক কিশোরী তার কোলে সন্তান। কোন নৌকা থামছে না। অগত্যা আমাদের রিজার্ভ নৌকা থামিয়ে কিশোরীটিকে তুলে নেওয়া হল।

কিশোরী ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের আপন ভাগ্নি, আমরাও চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাব শুনে, মেয়েটি খুব খুশী। আমাদের যাওয়া উপলক্ষ চেয়াম্যান সাহেবের বাড়িতে খানাদানা হবে। তিনি খুব উতসাহী গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার ব্যপারে। মেয়েটিকে দেখেই মনে হল, সে তার হাড় জিরজিরে শরীরে, এই দাওয়াত মিস করতে চায় না। একবেলা একটু ভালো খাবার জন্য সন্তান নিয়ে চলেছে মামার বাড়ি---শুনেছে শহর থেকে লোক আসবে। কিন্তু জানেনা, শহর থেকে লোক কেন যাচ্ছে????
নশরতপুরে ছিলাম, রোজ সকালের নাশতায় স্পেশ্যাল মেনু্ ছিল, রসমঞ্জুরী, আহা!
তো মেয়েটির কাছে জানতে চাইলাম তার বয়স কত? সে বল্লো ১৪ বছর--------------------------- Sad( Sad( Sad( Sad(

উত্তরাঞ্চলের লোকজন এখনও বাংলাদেশের যে কোন অঞ্চলের চেয়ে সহজ সরল এবং দরিদ্র। বিশেষ করে গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম এবং নিলফামারীর তো তুলনাই চলে না। এত এত দরিদ্র মানুষ। মনটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যায মনে হলে।
এদের নিয়ে লিখেছিলেন, মোনাজাতউদ্দীন। তাঁর পথ থেকে পথে বইটা পড়লে এই বয়সেও মনটা ভার হয়ে থাকে।

@সামছা আকিদা জাহান, আপনি যদি গাইবান্ধার মেয়ে হন, তাহলে ভিন্ন কথা। তা না হলে দয়া করে ঐ অঞ্চলের লোকদের কঞ্জুস বলবেন না প্লীজ। আপনি জানেন না যে, মানুষ কত দরিদ্র হতে পারে। আর সব অঞ্চলেই এরকম খারাপ ভালো বা কঞ্জুস লোক পাবেন।

৩১

নীড় সন্ধানী's picture


উত্তরবঙ্গে মাত্র একবার গিয়েছি অনেক বছর আগে। সেই লালমনিরহাট, পাটগ্রাম, বুড়ীমারী, তিনবিঘা করিডোর দর্শন। রংপুর থেকে মাঝরাতে উদোম গায়ে বাসের ভেতর কালো কুচকুচে এক দঙ্গল লোক উঠতে দেখে আমি ও বন্ধুরা আসন্ন ডাকাতের আক্রমনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। খানিক পরে লজ্জিত হয়ে দেখলাম সেই মানুষগুলো নিতান্তই খেটে খাওয়া দরিদ্র মানুষ। মানুষ কত দারিদ্রের ভেতর বাস করতে পারে ওদিকে না গেলে বোঝাই যায় না। একই দেশে অঞ্চলভেদে ধারনার কত পার্থক্য!

৩২

মেসবাহ য়াযাদ's picture


গাইবান্ধা ২ বার গেছিলাম। সে অনেকদিন আগের কথা। প্রথম আলোর হয়ে ত্রাণ দিতে। শহর পার হয়ে ট্রলারে করে চরে গেছিলাম। সাথে ছিলেন গিয়াস আহমেদ, মাহমুদুজ্জামান বাবু। তোতা ভাই (প্রথম আলো), লিটন, কিংশুক, হিমুন (এখন কালের কন্ঠে), মানিক বাহার, বাবু (যায় যায় দিন) এদের সাথে তখন পরিচয়। মানুষের জীবনযাত্রার মান দেখে অবাক হয়েছি। বেশিরভাগ লোক জানেনা, দেশের প্রেসিডেন্ট আর প্রধানমন্ত্রী কে ? এতে তাদের কিছু যায় আসে না। কী এক জীবন তাদের !!

৩৩

শওকত মাসুম's picture


কাজের চাপে সবার মন্তব্যের জবাব আলাদা আলাদা দিতে পারলাম না। আজ সময় পেলঅম, কিন্তু মনে হচ্ছে অনেক দেরি করে ফেলেছি।

৩৪

mr yakub's picture


শামীম ভাই আমার ভালবাসা রইলো।আপনার লেখা পড়ে আনন্দিত হলাম।আমি সেই মোল্লার চরেরই একজন।তাই আপনার সাথে কিছু লেখতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।যদিও আমি প্রবাসে থাকি,তার পরেও আমার সেই চরকে ভুলতে পারিনা যে মাটিতে ভর করে হাঁটা শিখেছি।আজ প্রবাসের দালান কোঠাও আমাকে বিমোহিত/আছ্ন্ন করতে পারেনি। আমার চরের প্রতিটি ধুলিকনা আমাকে বাড়িয়ে তুলেছে ।ভাই গর্ব করার মত আমার কিছুই নাই।চরের মানুষ গুলো এখনো অবহেলিত,যেন এদের পাশে দাড়ানোর মত কেউ নেই।তাই আমার ছোট একটি অনুরোধ আপনারা যারা মিডিয়াতে লেখা লেখি করছেন আপনাদের সামান্য লেখনিতেই হয়ত সরকারের সু নজর আসতে পারে।আপনার মংগল কামনায়॥

মন্তব্য করুন

(আপনার প্রদান কৃত তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হবেনা অথবা অন্য কোন মাধ্যমে শেয়ার করা হবেনা।)
ইমোটিকন
:):D:bigsmile:;):p:O:|:(:~:((8):steve:J):glasses::party::love:
  • Web page addresses and e-mail addresses turn into links automatically.
  • Allowed HTML tags: <a> <em> <strong> <cite> <code> <ul> <ol> <li> <dl> <dt> <dd> <img> <b> <u> <i> <br /> <p> <blockquote>
  • Lines and paragraphs break automatically.
  • Textual smileys will be replaced with graphical ones.

পোস্ট সাজাতে বাড়তি সুবিধাদি - ফর্মেটিং অপশন।

CAPTCHA
This question is for testing whether you are a human visitor and to prevent automated spam submissions.

বন্ধুর কথা

শওকত মাসুম's picture

নিজের সম্পর্কে

লেখালেখি ছাড়া এই জীবনে আর কিছুই শিখি নাই।