একটা ছেড়া রাত, স্বপ্নগুলো নষ্ট
১
ঢাকা ভার্সিটিতে ইকনমিকস নিলে ফোর্থ সাবজেক্ট হিসাবে ম্যাথ আর স্ট্যাটিসটিকস নেয়া বাধ্যতামূলক। চিরজীবনই আমার অংকের ভীতি আছে। অংক যাও বুঝি, পরিসংখ্যান একদমই না। সেই অংক আর পরিসংখ্যান নিতে হল বাধ্য হয়ে। পরিসংখ্যান ম্যাডাম ছিলেন দারুণ সুন্দরী। সুতরাং পরিসংখ্যান বুঝি আর না বুঝি ক্লাশে হাজির থাকতামই। বছর শেষে দেখা গেল স্টাটিসটিকস কিছুই বুঝি নাই, বুঝলাম খালি ভাইটাল স্টাটিসটিকস।
তারপর অংক আর পরিসংখ্যান শিখতে ফার্মগেট এলাকায় এক টিচারের কাছে পড়তে যেতাম। সঙ্গে আমারই ক্লাশের আরও তিনটি মেয়ে। ফলাফল একই। শিখলাম কেবল ভাইটাল স্টাটিসটিকসটি।
আমার বন্ধু বশির সম্ভবত ভাইটালটাও বুঝলো না। পরীক্ষার সঙ্গে তার সঙ্গে একটা দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করলাম। আমি তাকে অংক দেখাবো, আর সে দেখাবে পরিসংখ্যান। কারণ এইচএসসিতে পরিসংখ্যানে তার লেটার মার্ক ছিল। নিয়ম হচ্ছে ফোর্থ সাবজেক্ট তিনটি মিলিয়ে ১০০ পেতে হবে, কিন্তু ২৫ এর নীচে কোনোটাতেই পাওয়া চলবে না। অংক আমি বশিরকে দেখালাম। পরিসংখ্যান পরীক্ষার আগের রাতে ভাবলাম, নিজেও কিছু শিখি। বশিরের উপর ভরসা করা ঠিক হবে না। ভাগ্যিস শিখেছিলাম। প্রশ্ন পাওয়ার পর দেখি বশির করুণ মুখে আমাকে বললো, দোস্ত কিছু তো পারি না।
সেই পরীক্ষায় আমি পাশ করেছিলাম। সম্ভবত ২৫ এর জায়গায় ৩৪ বা ৩৬ পেয়েছিলাম। বলা যায় ভাইটাল স্টাটিসটিকস-এর শিক্ষা কিছুটা তো কাজে লেগেছিলই।
২.
পরিসংখ্যানের কথা মনে পড়লো কেন? সরকারের বিলবোর্ড প্রচারণা আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬শ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য জেনে। বিলবোর্ড জুড়ে ছিল অসংখ্য পরিসংখ্যান। আমার ব্যক্তিগত ধারণা সরকার তার সবচেয়ে বড় সাফল্যের কথাই বিলবোর্ডে স্থান দেয়নি। যেমন ধরেন, সরকার বলতে পারকো-২০০৬ সালে দেশের প্রতিটি মহিলার উর্বরতার হার ছিল ২.৪, আর এখন সেটি কমে হয়ছে ২.১১। আর রূপকল্প অনুযায়ী ২০১৫ সালে হবে ঠিকঠাক ২।
কেন আমি এটিকে বড় সাফল্য বলছি? নারায়ণ দাশশর্মা নামের এক লোকের একটা লেখা টুকলিফাই করলেই বিষয়টি পরিস্কার হবে। তিনি আবার টুকলিফাই করেছিলেন বিলেতের পাঞ্চ পত্রিকা থেকে।
‘সরকারি পরিসংখ্যান থেকে জানতে পারলুম, এ দেশের প্রত্যেকটি পূর্ণবয়স্কা স্ত্রী লোকের গড়পড়তা ২.২টি করে সন্তান আছে; আমরা বলি কি, ওই দশমিক ভগ্নাংশ বাচ্চা নিয়ে মেয়েদের নিশ্চয়ই ভারী অসুবিধে হচ্ছে, সরকার থেকে সাহায্যটাহায্য দিয়ে আরও দশমিক আট সন্তান প্রসব করার জন্য ওদের উৎসাহ দেওয়া উচিত, যাতে করে প্রত্যেকটি মায়ের ছেলেপুলের সংখ্যা ভাঙাচোরা না থেকে গোটা গোটা হতে পারে।’
সুতরাং বলা যায়, কমিয়ে ২ বা বাড়িয়ে ৩ করলে দেশের মেয়েদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। এমনিতেই তেঁতুল হুজুরের কারণে মেয়েদের ভোট আওয়ামী লীগ পাবে বলে অনেকের ধারণা। এই কষ্টটি লাঘব করলে পাপিয়ারাও লাইনে আসতে পারে কিন্তু।
৩.
আমি তখন আরেক পত্রিকায় কাজ করি। তখন ক্ষমতায় আরেক সরকার। অনেকেরই নিশ্চই মনে হচ্ছে ৯৬ এর আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতা ছেড়ে দেয় তখন রিজার্ভ ছিল ১০০ কোটি ডলারেরও নীচে। এর পর চলে আসে বিএনপি সরকার। তখন রিজার্ভ বাড়ছিল। এই রিজার্ভ বাড়া নিয়ে একটা রিপোর্ট করতে গিয়ে এক বিশেষজ্ঞের মন্তব্য নিতে গেলাম। তিনি বললেন, এ হচ্ছে লাশের শান্তি। কারণ বিনিয়োগ নাই, ডলারের চাহিদা নাই, আমদানি নাই। ফলে রিজার্ভ তো বাড়বেই। সুতরাং একে বলা যায় লাশের শান্তি।
সেই মন্তব্যকারী এখন এই সরকারের উচ্চ পদে। ভাবছি মনে করিয়ে দেবো কি না।
৪.
দুইটা নতুন প্রবাদ বানাইছি
ক. প্রাণ খেলে প্রাণ যায়
খ. লোভে পাপ, র্যাবে মৃত্যু
৫.
পরিবেশ নিয়া একটা গল্প বলি।
আদমকে ডেকে পাঠালেন ঈশ্বর।
তিরস্কার করে বললেন, 'আমার কথা শোনো নি। সেই নিষিদ্ধ কাজটিই করলে। এ জন্য শাস্তি পেতে হবে।
কাচুমুচু হয়ে আদম বললো, ' কি শাস্তি ঈশ্বর?'
ঈশ্বর বললেন, 'বহিস্কার হও এই স্বর্গ থেকে। এখন থেকে তোমরা থাকবে পৃখিবীতে। এটাই তোমাদের শাস্তি।'
আদম উদাস হয়ে হাওয়ার কথা ভাবতে লাগলেন।
এবার ঈশ্বর জানতে চাইলেন, ' ভাল কথা, হাওয়া কই?'
আদম একটু লজ্জা পেয়ে বললো, 'সমুদ্রে গেল গোসল করতে'
নদী দূষনের সেই শুরু
৬.
এবার এটা গান শুনাই। অনেকেই শুনছেন। কিন্তু আমি আগে শুনি নাই। ইদানীং শুইনা মুগ্ধ হইছি।
চিরকূটের একটা গান
"একটা ছেড়া দিন, বুকের মাঝে কষ্ট
একটা ছেড়া রাত, স্বপ্নগুলো নষ্ট।
একটা ছেড়া দিন, বুকের মাঝে কষ্ট
একটা ছেড়া রাত, স্বপ্নগুলো নষ্ট।
তবু একটা আলোর ভোর
আমার পাশে তুই।
একটা রোদের ডাকে, আকাশটা ছুই।"
একই সংগে ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত
দারুন লিখিত তাজা তাজা পোষ্ট!
বাসায় আইসেন শান্ত
আজ পনেরো তারিখ, আশা করেছিলাম এর উপর লিখবেন । লিখলেন ছঁেড়া রাত আর নষ্ট স্বপ্ন । মন্দ না অবশ্য । আমারতো এখন সব রাতই ছঁেড়া আর স্বপ্নরা নষ্ট ।
তা নেহাত্ মন্দ হয়না, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরকে তঁার আগের মন্তব্যটা স্মরণ করিয়ে দিন যদি ! আমার ধারণা বেঠা ১০০% ভুলে গেছেন কি বলেছিলেন আগে ।
প্রবাদ দুটি ভাল পেলাম । গল্পটা দারুণ ! শুধু বোনেরা না ক্ষ্যাপলে হয় !
ভাল থাকুন ।
আপনিও ভাল থাকুন
বস দারুণ!!! অনেক দিন পর আপনার লেকহা পড়লাম।
আছেন কেমন?
খুব সুনদর
ধন্যবাদ পড়ার জন্য
দারুণ পোষ্ট!
প্রবাদগুলো ভাল লাগছে খুব, লোভে পাপ, র্যাবে মৃত্যু।
কবি মাসুম ভাই
এইটা গানেরই লাইন বাজি
একের ভেতর কত্তো কি!!
বিনোদনের সিনেমার স্টাইলে নাচ-গানের ভরপুর, আবার দেশের স্বার্থের কথা, জ্ঞানের কতা, সাথে দারুন একটা গা্ন, সবাই মিলায়ে মজাই
গানের লিঙ্কের জন্যে স্পেশাল থ্যাঙ্কু ভাইজান
হঠাৎ মনে হইল অনেকদিন কিছু লিখি না, তাই আবজাপ লিখছিলাম আর কি
ঝিরঝির বৃষ্টির মধ্যে চমৎকার (!) একটা জায়গায় বসে বৃষ্টি দেখে ঝালমুড়ি খেতে খেতে একটা এলোমেলো লেখা তৈয়ার করে তার শিরোনাম ঠিক করতে পারছিলাম না বলে পোষ্ট করা হয়নি, এইমাত্র আপনার লেখাার শিরোনাম দেখে মনে হইলো, ধুরো এই শিরোনাম তো আমারই দরকার ছিল। লেখা পড়ে ধারণা পাল্টে গেছে অবশ্য। আপনার শিরোনাম আপনারই থাক
ইয়ে.... যিনি লাশের শান্তির কথা বলেছিলেন, তাকে একটু মনে করিয়ে দেয়া হোক।
পুরা লেখাই পরিকল্পনা ছাড়া লেখা, শিরোনামটাও তাই
গানটা মন উদ্ভ্রান্ত করা, শুধু মেয়েটার গায়কীটা কেন জানি শান্তি দেয় নাই...
আমার তো ভালই লাগছে
কি জানি, আমার কাছে কেমন প্রাণহীন লাগছে। বরং ছেলে কন্ঠটা অনেক স্পন্টেনিয়াস...
নারায়ণ দাশশর্মাতো দেখি পুরাই গুরু
পুরাই
হাওয়া সমুদ্রে গেল গোসল করতে, নদী দূষনের সেই শুরু - সমুদ্রের পানি নদীতে আসে কেমতে?
...ছাত্রাবস্থায় আপ্নের জিওগ্রাফী দেখা থুক্কু শেখা হয় নাই ঠিকমত
.
স্বর্গে যাহা সমুদ্র তাহাই নদী

পানিদূষণ পড়িতে হইবে
ভাল্লাগছে লেখা।
আপ্নের ছেলের কথা শুনি না অনেকদিন..
ছেলে মেয়ের ভয়ে হাত পা.........
গল্পের বই আর চা কফির নেশা ধরায় দেন,
তাইলেই আর কোন প্রবলেম হপে না!
পড়েছিলাম আগেই। মোবাইলে। আজ মন্তব্য করে প্রমাণ রেখে গেলাম লেখটা ভালো লেগেছে।
আপনে যে কি! কি যে সব বলেন! তবে এমন পোস্ট প্রায়ই দেল তো আমরা বিনোদিত হতে পারি। ২ নং এত প্যাচের কেন!!
গানের জন্য ধইন্যা। কথাগুলা কি সুন্দর!
কমেন্ট আর করলাম না
মন্তব্য করুন