ইউজার লগইন

নাজমুল হুদা'এর ব্লগ

এক বোকা নানার বোকামী -২

(দুই)
নানা তার ফেসবুকে ‘I am Areeb’ শিরোনামে একটি এ্যালবাম তৈরী করল । সেখানে আরীবের হয়ে নানা লিখল –“আমার নাম আরীব । এ নামটি রেখেছে আমার লিজি নানি । বাবা আমার নাম রেখেছে অদ্বয় । ১৯ জুলাই আমার বয়স দেড় বছর পূর্ণ হবে । মানুষের মত সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আমার আছে । আমি এখনও বসতে পারি না । হাটতে পারি না । আমার হাত দুটো দিয়ে আমি কিছু ধরতে পারি না । প্রয়োজনীয় অক্সিজেন বাতাস থেকে নিতে পারি না বলে সব সময় আমার শ্বাস কষ্ট । আমার মেরুদন্ড শক্ত হয়নি, তাই ঘাড় ও পিঠ সোজা রাখতে পারি না । খাবার প্রায়ই শ্বাসনালীতে চলে যায় বলে খেতে আমার কষ্ট হয় । পানিও খেতে পারিনা ঠিক মত । আমার ডান পায়ের পাতা কেমন যেন, আমি হয়তো হাটা শিখতে পারব না । আমি সব শব্দ শুনতে পাই, সকলের কথাও শুনি, কিন্তু আমি তো কথা বলতে পারিনা । আর জানো, আমি এত বড় হয়ে গেলাম, আলো কি তা বুঝতে পারলাম না । আমার দুটো সুন্দর চোখ আছে, তা আমার কোন কাজে লাগেনা । আমি কিছুই দেখতে পাইনা । তোমরাও কি সবাই আমার মত ? আমি যেমন তোমাদের দেখতে পাইনা, তেমনই তোমরাও কি আমাকে দেখতে পাওনা ? তা'হলে আমাকে তোমাদের মত করে দাও না কেন ? মানুষের অসাধ্য নাকি কিছুই নাই ! আমি তো কোন অন্যায় করিনি, তা'হলে আমাকে কেন এত কষ্ট পেতে হচ্ছে । বিধাতারও কি সাধ্য নাই আমাকে তোমাদের মত করে দেবার ? আমি তোমাদের দেখতে চাই. তোমাদের মত হতে চাই, আমি একটা সাধারণ ও স্বাভাবিক ছেলে হতে চাই । তোমরা কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো ?”

ফেসবুকে আরীবের আকুলতা ও আকাঙ্খা পড়ে অষ্ট্রেলিয়া থেকে নানার এক ভাগ্নীজামাই (ডাক্তার) ফোন করল ।আরীবের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র মেইল করে পাঠালে কিছু করা যাবে বলে আশা দিল । খুলনার তৃষ্ঞা ও কৃষ্ঞা, যাদের কেউ কোথাও নাই, তাদের আধুনিক চিকিৎসা জুটল, অথচ আরীবকে এ পৃথিবীর অবহেলা সইতে হচ্ছে । তারা অস্ট্রেলিয়াতে উপভোগ করছে তাদের শৈশব, সেখানেই তারা মানুষ হবে । আরীবের জন্য এমন ব্যাবস্থাও করা যেতে পারে বলে সে জানালো । বোকা নানা আশায় বুক বাঁধে । সব ডকুমেন্টস পাঠায় তার ভাগ্নীজামাইয়ের কাছে । আর পাঠায় একটা মেইল --
“স্নেহভাজন স্বপন,

এক বোকা নানার বোকামী -১

এক নানা আর নানি সরকারি চাকরি হতে অবসর পাবার পরে স্বপ্ন দেখেছিল অনেক । নানা চাকরি সূত্রে চার-পাঁচটি দেশ দেখবার সুযোগ পেয়েছিল । তার ইচ্ছা ছিল অবসর জীবনে অন্ততঃ সে দেশগুলোতে স্ত্রীকে নিয়ে যাবে । আর্থিক অপ্রতুলতাহেতু তা সম্ভব না হওয়ায় দু’জনে সিদ্ধান্ত নিল, আগে নিজের দেশটা ঘুরে দেখতে হবে । দেশের সব অঞ্চল, বিখ্যাত সব ঐতিহাসিক স্থান, দর্শণীয় স্থাপনাসমূহ দেখার স্বপ্ন বাস্তবতার আলো দেখতে পাবার আগেই কেমন কেমন করে যেন সব স্বপ্ন হারিয়ে গেল ।

তাদের কন্যার কোল আলো করে মেয়ের পরে ছেলে এল । কি সুন্দর যে দেখতে ! নানা ও নানি নাতিকে দেখতে গেল, নাতির নাকে দেখল অক্সিজেনের টিউব লাগানো । সে টিউব লাগানো থাকলো তিন মাসেরও অধিককাল । মুখ দিয়ে খাবার খেতে পারেনা বলে টিউব ফিডিং-এর জন্য আরেকটা টিউব নাকে । হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হলো অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ । তার তাকানো এতই স্বাভাবিক যে, সে যে চোখে দেখেনা তা বুঝতে তাদের সময় লেগে গেল প্রায় চারমাস । নিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে, “চোখে তো কোন অসুবিধা নেই” ডাক্তারের অভিমত । সিটি স্ক্যান দেখে ডাক্তার কোন মন্তব্যই করলেন না । কিছুই নাকি করার নাই । নয় মাস বয়সের সময় নিউমোনিয়ায় ধরলো তাকে । নানা তাকে নিয়ে দিনদশেক হাসপাতালে কাটালো । যে হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়, সেখানেই শুনতে হয়. “বাচ্চার মা কোথায়?” শেষে অতিষ্ট হয়ে নানা নিজেকে ওর মা বলে দাবী করলো । বড় বড় চোখ করে প্রশ্নকর্তা অবাক হয়ে তাকায় তার দিকে । ‘পেটে ধরলেই মা হয়না, যে মায়ের মত বাচ্চাকে আগলে রাখতে পারে সেই-ই তো আসলে মা’ – বক্তব্য তাদের উদ্দেশ্যে ।

যা না লিখলেও চলত

মাইনুল এইচ সিরাজীর 'হরে কর কমবা.......' পড়িয়া জানিতে চাহিয়াছিলাম যে তিনি উহা কোথা হইতে সংগ্রহ করিয়াছেন । জানিতে চাহিবার হেতু ছিল এই যে আমার নাবালক বয়সে আমাদের বন্ধুদের মধ্যে ইহা লইয়া প্রায়ই হাসাহাসি হইত । সিরাজী অতি দ্রুত আমাকে জানাইয়াছিলেন যে, তিনি তাহার পিতার নিকটে 'হরে কর কমবা.......' শুনিয়াছিলেন । সিরাজীর ছেলেবেলার কথা মনে পড়িবার বাতিক রহিয়াছে (ফেসবুক প্রফাইল দ্রষ্টব্য ) । তাহার উত্তর পাইবার কিছু পরে আমারও হঠাৎ আমার ছেলেবেলার কিছু কথা মনে পড়িয়া গেল । যে সকল কথা মনে পড়িয়াছিল তাহার মধ্যে একটি সিরাজীর কাছে বার্তা আকারে পাঠাইয়াছিলাম । আমার মনে হয় ব্যস্ততার কারণে তিনি উহা দেখিবার সময় পান নাই । তাই অদ্য সকলকে সেই স্মৃতিটুকুর সঙ্গী করিবার আহ্লাদ হইয়াছে । যাহা এইখানে লিপিবদ্ধ করিলাম ............

মাটির গন্ধ

না, আমি কোন গুরুগম্ভীর বিষয়ের অবতারনা করতে যাচ্ছি না । মনে মনে কত কথার জাল বুনে চলেছি অহরহ, সে সব কথা শুনবার, শুনাবার মত আমার কোন বন্ধু ছিল না এতদিন ! এখন “আমরা সবাই বন্ধু, আমাদের এই ‘আমরা বন্ধু’তে” । তাই এখানে সেই সব আবোল-তাবোল কথা বলতে ইচ্ছা করছে । আমার মনে হতে শুরু করেছে যে, এ আসরে মনের কথা অকপটে বলা যায়, এখানে আমার কথার নিবিষ্ট শ্রোতা আছে ।

কথার কথা

আমরা বন্ধুত্বের জয়গান গাই। বন্ধুর মতো একে অপরের পাশে দাঁড়াই , পাশে দাঁড়াই গোটা মানবজাতির, এমনই শ্লোগান সামনে রেখে ২০০৪ সালের ২৮ অক্টোবর 'আমরা বন্ধু'র যাত্রা শুরু হয়েছিল । আর মাত্র ক'দিন পরেই ছয় বছর পূর্ণ হবে । বর্ষপূর্তিতে বিশেষ কোন আয়োজন আছে কিনা তা জানা নাই ।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে 'আলপিন' নামে প্রথম আলো থেকে একটা ক্রোড়পত্র বের হত । এতে আরিফের আঁকা কার্টুনের কথাও ভুলে যাবার কথা নয় । আরিফের আঁকা একটা কার্টুন নিয়ে তুলকালাম কান্ড ঘটানো হয়েছিল । আরিফের দন্ডিত ও আলপিন বন্ধ হওয়া সেও তো বেশী আগের কথা নয় । সেই আরিফের মায়ের দু'টি কিডনীই নষ্ট হয়ে গেছে । এ মা দু'টো অবুঝ শিশু সন্তানসহ স্বামী কর্তৃক বিতাড়িত হয়েছিলেন এবং অনেক লাঞ্চনা গজ্ঞনা সয়ে সন্তানদের এখনও বাঁচিয়ে রেখেছেন । মায়ের এ গুরুতর অসুস্থতা তাঁর সন্তানদের হতবিহ্বল করে তুলেছে ।

সুখে থাকলে ভূতে কিলা্য়

সরকারি কলেজে সুখের সাথে মনের আনন্দে চাকরি করছিলাম । ভূতের পরামর্শে ১৯৮২ তে প্রশাসন ক্যাডারে ঢুকবার আবেদন করতে হয়েছিল । কিলাতেই থাকলো সে । পিএসসি'র মনোনয়ন পেলাম । ভূতের কিলে অতিষ্ট হয়ে শেষে ১৯৮৩র জুনে পেশা বদল করতেই হল । বাধ্য হয়ে বয়সের বাধা না আসা পর্যন্ত তা করতেও হল । আগের পেশায় থাকলে যতখানি এগুতাম এখানে তার ধারেকাছেও যেতে পারলাম না। এটি ঈশপের গল্প হলে শেষ হত যে বাক্য দিয়ে তা হল, " কদাপি মধ্য বয়সে পেশা বদল করিও না" ।
পুনশ্চঃ ও হ্যা, অন্য একটি কথা । এ গল্পের সাথে সম্পর্কিত নয় মোটেই । এটি ব্লগ সম্পর্কিত ।কেউ আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন 'ব্লগর ব্লগর' কি জিনিষ !

যে সাধ অপূর্ণ থাকেনি

"যেদিন সব কিছু পিছনে ফেলে
জীবনের সীমারেখা অতিক্রম করে যাব
সেদিন যেন কেউ কেউ
কাধেঁ করে আমাকে এখানেই রেখে যায় ।
সুলতা, তুমি কেঁদোনা -
তোমার চোখের পানিতে
আমার চলার নতুন পথ
ঝাঁপসা হয়ে যেতে পারে -
শুধু আমার সঙ্গী হিসেবে রেখে যেয়ো
একটি ছাতিম আর একটি শিউলির চারা ।

দেখো -
সকলের কাছাকাছি হয়েও
তবু যেন একটু দূরত্ব থাকে ;
সারা জীবন সবাইকে
দুঃশ্চিন্তা আর অনিশ্চয়তার আবর্তে
বারবার শঙ্কিত এবং বিপদগ্রস্থ করে তুলেছি -
চিরশান্তির নিস্তব্ধতার মাঝে
যেন আর কোন ঢেউ তুলতে না পারি
যেন কারো চিরকালীন ঘুমের ব্যাঘাতের
কারণ না হয়ে উঠি -
তার জন্যই এই সতর্ক দূরত্ব ।"
--চলো বেড়িয়ে আসি, শুজা আহমাদ

আমার কথা ঃ শুজা আহমাদের প্রকাশিত একমাত্র বই 'চলো বেড়িয়ে আসি'তে তার আর সব ইচ্ছা-আকাঙ্খা পূরণ হোক আর না হোক গত ২৮ জানুয়ারি তার এ ইচ্ছাটা পূর্ণ হয়েছে ।

আমার '৭১

টুটুল লিখেছেন, "আমার কোন ভুল না হলে মু্ক্তিযুদ্ধকে আপনি একেবারে আপনার পরিপক্ক অবস্থায় দেখেছেন। আপনার সেই সময়কার কথা শুনতে চাই। যেটা পরবর্তীতে ইতিহাস হয়ে পথ দেখাবে পরবর্তী প্রজন্মকে ।"
সত্যিই তো, আমার সে সময়কার কথা এ সময়ের তরুণদের শুনবার ও জানবার আগ্রহ থাকতেই পারে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ক্লাশের ছাত্র - ৬৮-৬৯এর প্রতিটি আন্দোলনের, প্রায় প্রতিটি মিছিলের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ । ৭০-৭১এ কলেজের শিক্ষক, ছাত্রদের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানে উৎসাহী ও উদ্বুদ্ধ করা এ সব তথ্য আমি কাউকে জানাবো না কেন ?

বন্ধুদের জন্য

এ পর্যন্ত আসতে আমার মাথার ঘাম পায়ে না পড়লেও গায়ে পড়েছে । ঝুনো নারকেল ভাঙতে যে কষ্ট তার চেয়ে বেশী কষ্ট পাকা মাথায় কম্পিউটার ঢুকানো । পুত্র, কন্যা, পুত্রবধু সবার কাছে সহায়তা নিয়ে তবেই ব্লকে লিখবার সুযোগ হলো । ব্লগে ঢুকতে যেয়ে মাথা গেছে ব্লক হয়ে । যা কিছু মাথায় ছিল তা এখন সব হ্যাং হয়ে জট পাকিয়ে গেছে । এ জট খুলবে সহজে এমনটি ভাববার অবকাশ নেই । নিয়েছিলাম রম্যরচনার উদ্যোগ, গেল সব ভন্ডুল হয়ে । চব্বিশ ঘন্টা যাকে থাকতে হয় উদ্বেগ নিয়ে - তার গভীর আলোচনায় গেলে কি চলে ? পুত্র বুলবুলের মৃত্যুশোক ভুলতে কাজী নজরূল হাস্যরসাত্বক পুস্তক রচনা করেছিলেন । হ্যাং হওয়া মগজ থেকে সে বইএর নাম বের হচ্ছেনা কিছুতেই । আজ থাক, কেবল তো শুরু - "আমরা বন্ধু", কাজেই বন্ধুর এ ব্যার্থতা অন্তত প্রথমবারের মত উপেক্ষা করা যায় ।