আমন্ত্রণ
ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইমরান।পূর্ণিমার রাতেও আকাশের সেই তারা দুটো’কে এক নজর দেখার জন্য উদ্বিগ্ন ও।পৃথিবী থেকে মৃত্যুর অজানা,অচেনা,রহস্যময় জগতের অস্তিত্ব অনুভব করা যে যায়না এ সত্যটা কোনভাবেই বোঝাতে পারেনা নিজেকে।“ওই যে পাশাপাশি দুটো তারা দেখছ,ওরা তোমার বাবা আর মা”,ছয় বছর বয়সে চাচার মুখ থেকে শোনা কথাটি আজও অবিশ্বাস করতে পারেনা ইমরান।আজ ওর বাবা-মা’র বিবাহ বার্ষিকী।গভীর রাতে তাঁদের মিলনক্ষণে তারারা হয়তো নিজেদের বিসর্জন দিয়ে আলোকসজ্জার আয়োজন করেছে।আলোকিত আকাশের উজ্জ্বল তারাটাই হয়তো তাঁদের মিলনস্থল।ভাবতে ভাবতে চোখে পানি এসে গেল ইমরানের।দু আঙ্গুলের মাঝের লাল আলোটা নিভে যাবার উপক্রম।ঠিক তখনই ফোনটা বেজে উঠল।ইয়েস বাটনে চাপ দিয়ে ফোনটা কানে রাখল ইমরান।ওপাশ থেকে অসম্ভব মিষ্টি একটা কণ্ঠ ভেসে আসল,
“কেমন আছ?”
পাঁচ বছর বয়সে রোড এক্সিডেন্ট এ ইমরান বাবা-মা কে হারিয়েছে।তারপর ওর লালন পালনের দায়িত্ব নেন চাচা।তিন বছর পর তিনিও চলে যান।চাচীর নিষ্ঠুর ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে একদিন বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।আপন জনের ভালবাসা পাওয়ার সুযোগই মেলেনি ওর।
মিষ্টি কণ্ঠ আবার বলে উঠল,“কী ব্যাপার,কথা বলছ না কেন?”
ইমরানের হঠাৎই মনে হল পৃথিবীতে তার আপন কেউ আছে,কারো হৃদয়ে তার জন্য কিছুটা হলেও জায়গা আছে।ইমরান মিষ্টি কণ্ঠে সাড়া দিল।
কথা বলতে বলতে ভালোবাসার এক উষ্ণ জগতে পারি জমালো ইম্রান,সাথে সঙ্গিনী আঁখি।প্রেমের অটুট বন্ধনে বাঁধা দুটি হৃদয় সেখানে বাঁধহীন স্বাধীনতায় বিচরণ করে বেড়ায়।মনের হাজারো দুঃখ-কষ্ট হার মানছে তার ভালোবাসার উপাখ্যান রচনায়।এভাবেই যে রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই ওর।হঠাৎ লাইনটা কেটে যাওয়ায় সম্বিত ফিরল।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে শিউড়ে উঠল।
রাত দুইটা পঁয়তাল্লিশ...
সমস্যাটা ইদানিং বেড়ে যাচ্ছে।
আঁখির সাথে রোজ রাতেই কথা বলে ইমরান।মাঝে মধ্যে ঠিক রাত দুইটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে লাইন কেটে যায়।ঠিক তখনই ঘটে অদ্ভুত ঘটনা।পাশের বিল্ডিং এর ছাদ থেকে ভেসে আশে নূপুরের শব্দ।কখনও শোনা যায়,যেন কেউ মুখ টিপে হাসছে।ইমরান বহুবার ঘটনার লজিকাল ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে,তবু মনের ভয় দূর হয়না।আঁখিকে বললে ও উপহাস করে বলে, “ছেলে মানুষ এত ভয় পায় নাকি?রাতে হয়তো পাশের বাড়ির মেয়ে ছাদে হাঁটে।তোমার মত ভীতু ছেলেকে দেখে হাসে।”
ইমরান আঁখিকে কল দেয়ার চেষ্টা করল,কল ঢুকছে না।ঠিক তখনই নূপুরের ধ্বনিটা কানে আসল।শব্দটা ধীরে ধীরে কাছে আসতে লাগল।ভয়ে ইমরানের গা কাটা দিয়ে উঠছে।ভূত-প্রেতরা নাকি আগুন ভয় পায়, ইমরান দ্রুত সিগারেট ধরাতে গিয়ে আঙ্গুল পুড়িয়ে ফেলল।নূপুরের শব্দটা আরো জোড়ে শোনা যাচ্ছে।হঠাৎ শব্দ থেমে গেল,তারপর শুরু হল সেই চাপা হাসি।ইমরান সিগারেটে ঘন ঘন টান দিচ্ছে।
হাসি থামিয়ে নারী কণ্ঠ বলে উঠল, “এই চল,আমি তোমাকে নিতে এসেছি।”
পাশের বাড়ির মালিকের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।বিয়ে মাস খানেক পর।আমেরিকা প্রবাসী ছেলে আজ মেয়েকে দেখতে এসেছিল।মেয়ে দেখে পছন্দ হয়েছে।সেই আনন্দে মেয়ের বাবা আজকে থেকেই বাড়িতে আলোকসজ্জার বাবস্থা করেছেন।বাড়ির চারপাশে লাগানো হয়েছে সার্চলাইট।এতে আসেপাশের বাড়িগুলোও ফুটে উঠেছে।সেদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় এতসব আয়োজন দেখে খুশিই হল ইমরান।আগামী একটা মাস আঁখির সাথে নির্ভয়ে কথা বলা যাবে।
ঐদিন রাতে যা ঘটল তা আরো ভয়ংকর।নূপুরের শব্দ আর হাসির সাথে বিশাল একটা ছায়া দেখতে পেল ইমরান।ছায়াটি তাকে হাত নেড়ে ডাকছে।
বেশ কিছুদিন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল।
৭ দিন পর
“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে,আগামী মাসে বিয়ে”,আঁখির এমন হতাশ কণ্ঠ কখনই শোনেনি ইমরান।তাছাড়া এত সকালে ও কখনও ফোন করেনা।
কথাটা শুনে ইমরানের অবাক হবার কথা।কিন্তু সে নির্বিকার স্বরে বলল, “তাই নাকি?”
“তাই নাকি মানে কী?তোমার কী কিছুই বলার নাই?”
“নাহ”, ইমরানের স্বাভাবিক স্বর।
“আমাদের সম্পর্ক টা কি এগিয়ে নেয়া উচিৎ না?”
ইমরান তার মাদকাসক্ত সন্ত্রাস জীবনের সাথে কখনও কোনও পবিত্র জীবনকে জড়াতে চায়নি।কিন্তু আবেগের কাছে বার বার তাকে হার মানতে হয়েছে।সে কখনও আঁখির সাতে দেখা করতে চায়নি,ওর ঠিকানা পর্যন্ত জানতে চায়নি।
ইমরান শান্ত কণ্ঠে জবাব দিল, “সেটা সম্ভব না।”
ওপাশ থেকে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শোনা গেল,তারপর লাইনটা কেটে গেল।
ড্রাগসের প্রভাবটা মনে হয় দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে,বোধ শক্তি ক্রমশ লোপ পাচ্ছে।‘বিয়ের ৭ দিন আগে কনের আত্মহত্যা’র খবরটা ইমরান খুব স্বাভাবিকভাবে নিল।তবে সেদিনের পর ‘ঘুম’ নামের অপূর্ব মায়াটি বিদায় নিল তার জীবন থেকে।ছাদের সেই নূপুরের ধ্বনি আর হাসিটা এখন ওর রুমে ঢুকে পড়েছে।সাথে সেই পরিচিত ডাক,
“এই চলো,আমি তোমাকে নিতে এসেছি।”
বেশ ইন্টারেস্টিং প্লট... ভালো লাগছে...
রহস্যটা যেন ঝুপ করেই শেষ করে দিলেন, গল্প ভালো লেগেছে।
কোণের আত্মহত্যা বানান ঠিক করে দিয়েন
আরেকটু ধিরে
তাড়াহুড়ো করাটা বদ অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।

ভাল লাগল। লিখতে থাকুন।
রহস্যটা যেন ঝুপ করেই শেষ করে দিলেন, গল্প ভালো লেগেছে।
মন্তব্য করুন