পিশাচের কান্না কিংবা মূষিকের
“চৌধুরী সাহেব,আমাকে চিনতে পেরেছেন?”
“না,কে তুমি?”
“জ্বী আমি রমেশ চন্দ্র পাল।‘রামকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভান্ডার’ এর কর্মচারী ছিলাম”
“ও”
“চৌধুরী সাহেব মনে হয় চিনতে পারেননি।একবার মেজর সাহেবকে নিয়ে দোকানে মিষ্টি খেতে এসেছিলেন।দোকানে সেদিন কেউ ছিল না।মেজর সাহেব আমাকে কারিগর ভেবে দশ টাকা বখশিশ দিয়েছিলেন”
“কিন্তু তোর কথাবার্তা এত সুন্দর হল কিভাবে?তুই না বিশ্রি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতি?তোর পোশাক-আশাকেও তো দেখি ভদ্র ভদ্র ভাব...”
“স্বর্গে আছি কিনা,এখানে সবাই ভদ্র।ব্রহ্মার পায়ের তলা থেকে জন্ম নিয়েছিলাম বতে,কিন্তু স্বর্গ দেবতা আমাদের মাথায় তুলে রেখেছেন।”
“ও”
“চৌধুরী সাহেব”
“হুম”
“আমার মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গিয়ে অনেক অত্যাচার করেছেন,তাই না?জন্মের পর ওর মা মারা গিয়েছিল,মেয়েটাকে আমি কখনও কোন কষ্ট দেইনি।বেচারি স্নান করছিল তখন,ওকে কাপড়টা বদলানোর সুযোগ দিলেন না আপনারা...আচ্ছা,আপনারও তো একটা মেয়ে আছে।ওর সাথে যদি কেউ...”
“কি বলিস এসব?তোকে আমি...”
“ওসব পার্থিব কথা,আমি যে এখন জগতের ঊর্ধ্বে সেটা আপনি ভুলে যাচ্ছেন।আমাকে স্পর্শ করার ক্ষমতাও আপনার নেই।”
“...!!”
“চৌধুরী সাহেব”
“হুম”
“মাওলানা সাহেবের কথা মনে আছে?”
“কোন মাওলানা?”
“ভাঙ্গা মসজিদের ঈমাম সাহেব,যাকে আপনি গুলি করে মেরেছিলেন।উনার অপরাধ কী ছিল মনে আছে আপনার?”
“সে দেশদ্রোহী ছিল”
“ভুল বল্লেন।উনি দেশদ্রোহী ছিলেন না।পাকিস্তানে উনার জন্ম,পাকিস্তানের নুন খেয়ে উনি পাকিস্তানেই মরতে চেয়েছিলেন।”
“তাহলে?”
“আমার মেয়েটাকে যখন নগ্ন অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছিলেন মাওলানা সাহেব তখন নিজের গায়ের চাদর খুলে মেয়েটার গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলেন।এটাই ছিল তার অপরাধ।ভগবান উনার মনের আশা পূরণ করেছেন,পাকিস্তানেই উনার মৃত্যু হয়েছে।”
“...!!”
“উনি স্বর্গেই আছেন,মাঝে মধ্যে দেখা সাক্ষাত হয়।এখানকার মা-বোনেরা উনাকে বিশেষ সম্মান করেন।...আচ্ছা চৌধুরী সাহেব, ফিরোজের কথা আপনার মনে আছে?”
“কোন ফিরোজ?”
“মুক্তি ফিরোজ,প্লাটুন বাঁচাতে গিয়ে আপনার হাতে ধরা পরেছিল। আপনি বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে যার হৃৎপিণ্ড আপনার বাড়ির কুকুরটাকে খেতে দিয়েছিলেন।”
“এই ঘটনা তো তোমার জানার কথা না, তুমি জানলে কীভাবে?”
“আপনাকে আগেই বলেছি স্বর্গ দেবটা আমাদের মাথায় তূলে রেখেছেনসবকিছু জানার অধিকার দিয়েছেন।তাছাড়া আপনার হাতে যাদের মৃত্যু হয়েছে নিয়মিত তাঁরা একত্রিত হন।আমরা একসাথে ভগবানের কাছে আপনার জন্য প্রার্থনা করেছি, ভগবান সেটা গ্রহণ করেছেন।”
“কী প্রার্থনা?”
“আপনাকে একটা প্রশ্ন করি চৌধুরী সাহেব, বাড়িতে কুকুর পোষা কি হালাল?”
“প্রার্থনা...কী প্রার্থনা?”
“চৌধুরী সাহেব,আপনি কি আমাকে ভয় পাচ্ছেন?”
“নাহ... ভয় পাব কেন? কী প্রার্থনা করেছ তোমরা আমার জন্য?”
“ভয় থেকে সম্মানের উৎপত্তি এটা কি আপনি জানেন? আপনি আমাকে ‘তুই’ সম্বোধন করতেন,হঠাৎ করেই 'তুমি' বলা শুরু করেছেন।আপনি হলেন যমরাজ,আমার মত নমঃশূদ্র কে 'তুই' ডাকবেন,এটাই স্বাভাবিক।”
“আমার জন্য তোমরা কি প্রার্থনা করেছ?”
“চৌধুরী সাহেব, আপনি অনবরত ঘামছেন।বিছানার পাশের জানালাটা খূলে দিন।বেশিক্ষণ খোলা রাখবেন না।বাইরে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস।আপনার বয়স হয়েছে,ঠাণ্ডা লেগে কিছু হয়ে যেতে পারে।আমরা চাইনা এতো সহজেই আপনার কিছু হোক।”
“কী প্রার্থনা?কী প্রার্থনা?তোমরা কী প্রার্থনা করেছ আমার জন্য?”
বশিরউদ্দিন চৌধুরী চিৎকার করে যাচ্ছেন।এর মাঝে আজানের ধ্বনি শোনা গেল,
আসসালাতু খায়রুম মিনাননাওম
আসসালাতু খায়রুম মিনাননাওম
ঘুম হইতে নামাজ উত্তম
ঘুম হইতে নামাজ উত্তম
বশিরউদ্দীন সাহেবের সমস্যাটা ইদানীং প্রকট আকার ধারণ করেছে।রাতে ঘুমাতে পারেন না,আজেবাজে স্বপ্ন দেখেন।স্বপ্নে কেউ তাকে মারতে আসছে,ভয়ংকর সব কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।বয়স উনার সত্তর পেরিয়েছে,এ বয়সে বেশিক্ষণ হাঁটাহাঁটিও করা সম্ভব হয়না। শরীরের বিশ্রামের প্রয়োজন।চেয়ারে বসে যে বিশ্রাম নেবেন,সে উপায়ও নেই।তন্দ্রার মত আশার সাথে সাথে দুঃস্বপ্ন আক্রমন করে।ফজরের আজানের সাথে সাথে স্বপ্ন মিলিয়ে যায়।তখন চোখে নেমে আসে গভীর ঘুম।বশিরউদ্দীন সাহেব ঘুম থেকে ওঠার প্রাণপণ চেষ্টা করেন,কিন্তু শরীর নাড়াতে পারেন না।রোজই উনাকে ফজরের নামাজ কাজা পড়তে হচ্ছে।গত এক মাসে একদিনও তিনি ফজরের নামাজ সময়মত পড়তে পারেন নি।
বশিরউদ্দীন সাহেবের ঘুম ভাঙল সকাল এগারটায়।ঘরে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস।তিনি খেয়াল করলেন বিছানার পাশের জানালাটা খোলা।রাতে মনেহয় লাগানো হয়নি।বশিরউদ্দীন সাহেব নামাজ শেষে মানসিক প্রশান্তি লাভের জন্য বিশেষ মোনাজাত ধরলেন।এর মাঝেই দরজায় শিকল নাড়ার শব্দ পেলেন।তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হলেন।তিনি এখন বেঁচে আছেন অন্যের দয়ার উপর।এ অবস্থায় বিরক্তি তার জন্য হারাম।তিনি চেহারার বিরক্তি ভাব দূর করার ব্যর্থ চেষ্টা করলেন।দ্রুত মোনাজাত শেষ করে দরজা খুলে দিলেন।ঘরে ঢুকেই বিমল বশিরউদ্দীন কে সালাম করার জন্য ঝুঁকে পড়ল।ছেলেটা মাথা নিচু করে সালাম করছে,এ বিষয়টা তিনি খুবই অপছন্দ করেন।
বশিরউদ্দীন চৌধুরী এখন যে ঘরে আছেন সেটা বিমলের।ছোট্ট টিনের ছাপরা ঘর,ঘরের দেয়াল প্লাস্টার করা হয়নি।ঘরের ভেতর একটা ছোট খাট,একটা চেয়ার,একটা টেবিল আর কাঠের একটা আলমারি।টেবিলের কোনায় একটা গনেশের মূর্তি ছিল,বশিরউদ্দীন আসার পর সেটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে।তিনি এই ঘরে আছেন প্রায় দুই মাস ধরে।এই দুই মাস তিনি একবারও বাইরে বের হননি।আসলে প্রয়োজনও হয়নি।উনার নামে ওয়ারেন্ট জারি হওয়ার পর থেকে উনি পালিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন।কোথাও সাত দিনের বেশি টিকতে পারেননি।অবশেষে জায়গা হয়েছে এখানে।সন্ধানদাতা তাঁর ড্রাইভার মোখলেস হাওলাদার।বিমল তার পুরনো বন্ধু।মোখলেস যখন বিমলের কাছে সাহায্য চেয়েছে,সে নিজের ঘর ছেড়ে দিয়েছে।গলির মুখে তার একটা ভাতের হোটেল আছে,সে ওখানেই রাত কাটায়।বিমলের বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে।বিয়ে করেনি এখনও,করবে বলেও মনে হয়না।সে অত্যন্ত খিটখিটে স্বভাবের একজন মানুষ।কিন্তু কোন অজানা কারণে সে বশিরউদ্দীন চৌধুরীকে খুবই শ্রদ্ধা করে।এই দুই মাস সে তিনবেলা বশিরউদ্দীনের জন্য খাবার এনে দিয়েছে।খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে।বশিরউদ্দীনকে সে কাকা বলে ডাকে,প্রতিটা কাজ করার আগে সে তাঁর কাকার কাছে অনুমতি নেয়।বশিরউদ্দীন সাহেবের কাছে এতো খাতিরের কারণ স্পষ্ট না।মাঝে মাঝে তাঁর সন্দেহ হয়।একজনের দয়ায় বেঁচে থেকে তিনি তাকে সন্দেহ করছেন,এটা মোটেও ঠিক না।ইদানীং তিনি ধর্মীয় জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।আল্লাহ তাআলা সন্দেহপ্রবণকারীকে পছন্দ করেননা।
“কাকাজী,আপনার অনুমতি ছাড়া একটা কাজ করে ফেলেছি।যদি ক্ষমা দিতেন,”
বিমল অপরাধী কণ্ঠে বশিরউদ্দীন চৌধুরীকে কথাটি বলল।সে হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।বিমলের এমন আচরণ দেখে বশিরউদ্দীনের মনে হল সে তাঁর অনেক আপনজন।তিনি গম্ভীরভাবে বললেন,
“কী হয়েছে?”
“আমার ভাতের হোটেলের পাশে একটা মিষ্টির দোকান করেছি।কারিগর আমি নিজেই।আজকে দোকান চালু হবে,আপনে উদ্বোধন করবেন।”
“আমি উদ্বোধন করব?আমাকে তো আগে কিছু বলনি,”
বশিরউদ্দীন অবাক হলেন।চেহারার চিন্তিত ভাবতাও আড়াল করা যাচ্ছেনা।বিমল বিনিতভাবে বলল,
“এই অপরাধের ক্ষমা চাই।আপনে দয়ার সাগর,দয়া করে আমার কথা ফেলবেন না।”
আল্লাহ তাআলা দয়ার সাগর।আশরাফুল মাখলুকাদের সাথে এই বিশেষণ যোগ করা ঘোরতর অন্যায়।বিমল শিরকের মত গুনাহ করছে।বশিরউদ্দীন সাহেবের উচিত ছিল এই ভুল ধরিয়ে দেয়া,তিনি সেটা করলেন না।বিমল সম্মতির অপেক্ষা না করেই বলল,
“কাকাজী,দুপুর হইয়ে গিয়েছে।আপনেরে কি জলখাবার দিব,নাকি ভাত খাইবেন?”
বশিরউদ্দীন ভাত দিতে বললেন।বিমল চলে যাচ্ছিল,বশিরউদ্দীন তাকে ডাক দিয়ে বললেন,
“তোমার যে একটা পোষা কুকুর ছিল,সেটা কোথায়?”
“আপনে বলেছেন কুকুর পোষা ঠিক না,তাই ছেড়ে দিয়েছি।হারামজাদা তারপরও রাইত দিন দোকানের সামনে বইসা থাকে।”
বিমল দ্রুত কথা শেষ করে রওনা দিল।
খাওয়ার সময় বশিরউদ্দীন সাহেবের সাথে বিমল কখনও কথা বলেনা।আজ তার ব্যতিক্রম হল।বিমল তার মিষ্টি তৈরী শেখার ইতিহাস বর্ণনা করা শুরু করল।
“বুঝলেন কাকাজী,আমার দাদু(নানা) ছিলেন মিষ্টির দোকানের কর্মচারী।মালাউনের দোকান,কারিগর মুসলিম।মিষ্টির ‘ম’ ছিল তার জ্ঞানের বাইরে।৭১ সাল,বিহারী বইলা চাকরি পেয়েছিল।সপ্তাহে পাঁচদিন থাকত মিলিটারি ক্যাম্পে।ধান্দার তো পুরা বারো অবস্থা।মিষ্টি তৈয়ার আবার ছিল দাদুর বায়ে হাত কা খেল।তিনি পাল বংশের লোক।শূদ্র,অশুচ জাত।এদের হাতের সবই নিষিদ্ধ।আপনে জ্ঞানী মানুষ,এগুলা আপনের জানার কথা।একদিন দোকানের মালিক তাঁরে কইল,‘গুজবে শুনছি মিলিটারি মিষ্টি পছন্দ করে।দোকানে মিষ্টি থাকলে সব মাফ।এখন গুজবে বিশ্বাস করার সময়।বিহারীর উপর ভরসা করলে ব্যবসার সাথে জানও যাইব।আইজ থেকে তুই মিষ্টি বানাইবি,সত্য গোপন থাকবে।আমি ব্রাহ্মণ-শূদ্র মানিনা।মিলিটারির সামনে সব মালাউন এক।আর শোন,হাজম ডাইকা চামড়া ছেলার ব্যবস্থা নে,আমিও ব্যবস্থা নিতেছি।’এরপর থেইকে দাদু মিষ্টি তৈয়ার শুরু করেন।উনার দেখে মা শিখেছেন আর মায়ের কাছে আমি।এখন আর জাত-পাতের কেউ ধার ধারে না,সব এক"
খাওয়ার সময় কেউ কথা বললে বশিরউদ্দীন সাহেব সাধারণত বিরক্ত হন।আজ তিনি বিরক্ত হলেন না।হাসি মুখে বিমলকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“এই ঘটনা তোমার দাদু তোমাকে বলেছেন?”
এতক্ষণ পর বক বকের সাড়া পেয়ে বিমল দিগুণ উৎসাহে শুরু করল,
“জে না,মায়ে বলেছেন।দাদুতো আমার জন্মের আগেই মইরে গেছেন।মায়ের সামনেই তাঁরে গুলি করা হয়েছিল।যে রাজাকার গুলি করেছে তার নাম মা বলেছিল।এখন খেয়াল পড়তেছে না,খেয়াল পড়ার সাথে সাথে আপনারে বইলে যাব।”
এই ধরণের ঘটনা শোনার পর যে কোন মানুষের একটু হলেও কষ্ট পাবার কথা। বশিরউদ্দীন হাস্যজ্জল মুখে বললেন,
“হাজম ডাকার কথাটাও কি তোমার মা বলেছেন?”
বিমল খানিকটা লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল,
“জ্বে না,এইটা আমি যোগ করেছি।ক্ষমা দিবেন।”
“তোমার মা কোথায় থাকেন?”
“তিনি গতবছর পরলোক গমন করেছেন।ক্যান্সার হয়েছিল।চিকিৎসা অনেক করায়েছি, লাভ হয় নাই।মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে তিনি আমারে বলেছিলেন ভগবান তাঁর প্রার্থনা গ্রহণ করেছেন।”
দুপুরের খাবারের সাথে বিমল দু’টা মিষ্টি এনেছিল,ওর হাতে বানানো প্রথম মিষ্টি। বশিরউদ্দীন সাহেব মিষ্টি খেলেন।স্বাদটা অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে,এই মিষ্টি তিনি আগেও কোথাও খেয়েছেন।কিন্তু কোথায়?কিছু মনে করতে পারছেন না।
বাইরে বের হয়ে বশিরউদ্দীন চৌধুরী বেশ অবাক হলেন।চারদিকে উৎসবের আমেজ।সবাই লাল-সবুজ জামাকাপড় পরে আছে।কারো কারো মাথায় আবার পতাকা বাধা।অবশ্য তিনি নিজেও বিমলের দেয়া গাঢ় সবুজ পাঞ্জাবীটা পরেছেন।তিনি এই উৎসবের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করলেন না।অনেকদিন পর বের হয়েছেন বলে হয়তো এমন লাগছে।
বশিরউদ্দীন সাহেব লাল-সবুজ ফিতা কেটে বিমলের দোকান উদ্বোধন করলেন। ভেতরে ঢুকেই উনার চোখ পড়ল ডান পাশের দেয়ালে টানানো ফুলের মালা দেয়া ছবিটার দিকে।পঞ্চাশ-ষাট বছর বয়সের একজন মহিলা।ইনি নিশ্চয়ই বিমলের মা। এনাকে তো তাঁর চেনার কথা না।কিন্তু ছবির চোখ থেকে বশিরউদ্দীন চোখ ফেরাতে পারছেন না।চোখ দুটিতে এক ধরণের মায়া জড়ানো,ক্যামেরাম্যানও সেটা লুকাতে পারেনি।অসহায় এই মায়ার ফাঁদে পা দিয়েই কি একাত্তরের খ্যাতিমান বেশ্যা রাজাকার রমেশের মেয়েটাকে ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছিলো?ছবির নীচের লেখাটা দেখে চমকে উঠলেন বশিরউদ্দীন,
নামঃ শ্রীমতি বিদ্যা পাল
পিতার নামঃ শ্রী রমেশ চন্দ্র পাল
মাতার নামঃ শ্রীমতি ঝুলন পাল
বশিরউদ্দীন চৌধুরী বিমলকে নিয়ে দ্রুত ঘরে ফিরে গেলেন।যাবার সময় বিমলকে তার বাবার কথা জিজ্ঞেস করলেন।বিমল নিঃসংকোচে বলে গেল,
“বাবারে কুনদিন দেখিনাই।মা বলেছেন তিনি জানেননা বাবা কোথায়।ছোটতে যখন দাদুর ভিটায় থাকতাম,লোকজনে আমারে জারজ বইলে ডাকত।পরে মা ওই ভিটা ছেড়ে দেন।ছোটবেলায় শোনা লোকজনের কথা এখনো কানে বাজে।তাই বিবাহ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।জারজের বংশবিস্তারের কোন মানে হয়না।”
কথাগুলো বলার সময় তার চোখের পানি আটকাতে না পারলেও ঢেকে রাখতে পেরেছিল ঠিকই।
কয়েকদিন পর.....
দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রায় পুরোটা জুড়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক যুদ্ধাপরাধী মাওলানা বশিরউদ্দিন চৌধুরী ওরফে ‘বেশ্যা রাজাকার’ গ্রেফতার হওয়ার ঘটনার জায়গা হলেও গুরুতর আহত অবস্থায় একজন মিষ্টির দোকানদারের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবরটি কোথাও জায়গা করতে পারলনা।
""অনেকদিন ব্লগে আসতে পারিনি।ঈদের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলাম,সেখানে সময় থাকা সত্ত্বেও অসাধারণ(!!) অন্তর্জাল গতির সুবাদে ধৈর্য ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।ঢাকায় ফিরেই পরীক্ষা।যদিও এখনও শেষ হয়নি।।তারপরও লোভ সামলাতে পারলাম না।""
ভাল লাগা রেখে গেলাম। ওরা শাস্তি পাবেই। প্রতিটি কাজেই কিছু ক্ষতি মেনে নিতে হয়।
দারুণ লাগলো...
সত্যি নাকি গলপ?
খুব ভাল
মন্তব্য করুন