অন্ধকারের উৎস থেকে
১.
জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন জীবনে কবে প্রথম পড়েছিলাম মনে নেই। ক্যাডেট কলেজে একবার আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় বনলতা সেনকে ঠিক করা হয়েছিল। ক্যাডেট কলেজের নিয়ম হচ্ছে একটা কবিতাই নির্ধারণ করে দেয়া হতো। প্রতি হাউজ থেকে দুজন করে মোট ৬ জন একই কবিতা আবৃত্তি করতো। মনে আছে সেবার আমরা প্রায় সবাই বনলতা সেন মুখস্ত করেছিলাম। একটা অসাধারণ প্রেমের কবিতা হয়েই রয়েছে বনলতা সেন। স্বীকার করছি কবিতার প্রতিটি লাইন বোঝার চেষ্টা আমি কখনো করিনি।
ড. আকবর আলী খান মূলত আমলা। ইতিহাসের ছাত্র। পরবর্তীতে অর্থনীতিতেও উচ্চতর লেখাপড়া করেছেন। তাঁর একটা সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। অনেক বিষয়ের মধ্যে বনলতা সেনও ছিল। তিনি বনলতা সেনের একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন। সেটাই জানালেন। বলেছিলাম বিস্তারিত নিয়ে একটা বই লিখবেন।
বনলতা সেন
হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে আরো দূর অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকার বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনই দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‘এতোদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে চাওয়া নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ মুছে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন,
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল।
সব পাখি ঘরে আসে — সব নদী; ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।
গত বইমেলা থেকে কিনলাম বইটা, অন্ধকারের উৎস থেকে। পড়লাম বইটা। অনেক বিষয় আছে এখানে, তবে বনলতা সেনের ব্যাখা সত্যিই কৌতুহল জাগায়।
তিনি প্রতিটি শব্দের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, নিছক ছন্দ মেলাতে কবি শব্দগুলো ব্যবহার করেননি, বরং জেনেই ব্যবহার করেছেন।
ব্যাখ্যার অতি সংক্ষিপ্ত রূপ এরকম-
কবিতাটির শুরু এক ক্লান্ত পথিকের দীর্ঘ বিসর্পিল পথে যাত্রা নিয়ে। তবে এ যাত্রার শেষ নেই, বিরাম নেই। এখানে চলছে জন্ম-মৃত্যু চক্রের আবর্তন। অন্ধকারাচ্ছন্ন এ পথে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে অন্যায়, অত্যাচার ও ক্ষমার অযোগ্য পাপ। এ পথ পাপ পুণ্যের আলো-ছায়ায় ঘেরা। শুধু মানুষই পাপ করছে না, দেবতারাও ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত। এই পাপের জগতে পথ চলতে চলতে নায়ক ক্লান্ত। তবু চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে জীবনের প্রলোভন। এই অন্তহীন দুঃখের ভুবনে তাকে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল বনলতা সেন।
কে এই বনলতা সেন? এই বনলতা সেন নাটোরের মেয়ে এবং উত্তর বঙ্গে নাটোরের বিনোদবালারা ছিল বিখ্যাত। বনলতা বারবনিতা। বনলতা সেনের সঙ্গে কবিতার নায়কের সম্পর্ক অবৈধ, মিলন সম্ভব ছিল না। বনলতার সাথে যখন নায়কের দেখা তখন তিনি হাল ভাঙা নাবিকের মতো বিপর্যস্ত। তিনি বনলতাকে প্রেম নিবেদন করলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, 'এতোদিন কোথায় ছিলেন?'।
কবিতার নায়ক জীবন সায়াহ্নে উপনীত। হাল ভাঙা নাবিককেও জীবনের মূল স্রোতধারায় ফিরে আসতে হয়। ফরে ফিরে আসলেও কবিতার নায়ক বনলতাকে ভুলতে পারেন না। এ সম্পর্ক বৈধ নয়। তাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার মনে টানাপোড়েন চলছে। তবু পাপের ভয় নায়ককে বনলতার প্রেম থেকে নিবৃত্ত করতে পারে না। তাই ' থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন'। নিশ্চিত পাপ জেনেও কবিতার নায়ক জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বনলতার ধ্যানে মগ্ন।
আমি খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে লিখলাম। বইটায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা আছে। কিছু আধ্যাত্ত্বিক ব্যাখ্যাও আছে। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন। বাড়তি পাওনা থাকবে জীবননান্দ দাশের পদস্খলনের খানিকটা বিবরণ।
২.
জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেন নিয়ে আরও কবিতা লিখেছেন। মোট চারটি কবিতায় বনলতা নের রয়েছেন। উপন্যাস কারুবাসনাতেও আছে বনলতা সেন।
এর মধ্যে শেষ হল জীবনের সব লেনদেন কবিতাটিকে বনলতা সেন কবিতার পরের পর্ব বলা যায়।
শেষ হল জীবনের সব লেনদেন
শেষ হ’ল জীবনের সব লেনদেন,
বনলতা সেন।
কোথায় গিয়েছ তুমি আজ এই বেলা
মাছরাঙা ভোলেনি তো দুপুরের খেলা
শালিখ করে না তার নীড় অবহেলা
উচ্ছ্বাসে নদীর ঢেউ হয়েছে সফেন,
তুমি নাই বনলতা সেন।
তোমার মতন কেউ ছিল কি কোথাও?
কেন যে সবের আগে তুমি চলে যাও।
কেন যে সবের আগে তুমি
পৃথিবীকে করে গেলে শূন্য মরুভূমি
(কেন যে সবের আগে তুমি)
ছিঁড়ে গেলে কুহকের ঝিলমিল টানা ও পোড়েন,
কবেকার বনলতা সেন।
কত যে আসবে সন্ধ্যা প্রান্তরে আকাশে,
কত যে ঘুমিয়ে রবো বস্তির পাশে,
কত যে চমকে জেগে উঠব বাতাসে
হিজল জামের বনে থেমেছে স্টেশনে বুঝি রাত্রির ট্রেন,
নিশুতির বনলতা সেন।
আরেকটি কবিতা হচ্ছে 'ঘুচে গেছে জীবনের সব লেনদেন'। এই কবিতাটিতেও আছে বনলতা সেন।
হাজার বছর শুধু খেলা করে অন্ধকারে জোনাকির মতো;
চারি দিকে চিরদিন রাত্রির নিধান;
বালির উপরে জ্যোৎস্না — দেবদারু ছায়া ইতস্তত
বিচূর্ণ থামের মতো: দ্বারকার — দাঁড়ায়ে রয়েছে নত, ম্লান।
শরীরে ঘুমের ঘ্রাণ আমাদের ঘুচে — গেছে জীবনের সব লেনদেন;
‘মনে আছে?’ শুধালো সে — শুধালাম আমি শুধু, ‘বনলতা সেন?
আরেকটি কব্তিা হচ্ছে বাঙালি পাঞ্জাবি মারাঠি গুজরাটি
এর কয়েকটা লাইন হচ্ছে এরকম-
বনলতা সেন
তুমি যখন নদীর ঘাটে স্নান করে ফিরে এলে
মাথার উপর জ্বলন্ত সূর্য তোমার,
অসংখ্য চিল, বেগুনের ফুলের মতো রঙিন আকাশের পর আকাশ
তখন থেকেই বুঝেছি আমরা মরি না কোনো দিন
কোনো প্রেম কোনো স্বপ্ন কোনো দিন মৃত হয় না
আমরা পথ থেকে পথ চলি শুধু-ধূসর বছর থেকে ধূসর বছরে-
আমরা পাশাপাশি হাঁটতে থাকি শুধু, মুখোমুখি দাঁড়াই;
তুমি আর আমি।
৩.
জীবননান্দ দাশ নিজেই নিজের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন।
Banalata Sen
By Jibananda Das
Long I have been a wanderer of this world.
Many a night
My route lay across the sea of Ceylon somewhere winding to
The ocean of Malay.
I was in the dim world of Vimbisar and Asok, and further off
In the mistiness of Vidarbha.
At moments when life was too much a sea of sounds –
I had Banalata Sen of Natore and her wisdom.
I remember her hair dark as nights at Vidisha,
Her face; image of Sravasti; the pilot
Undone in the blue milieu of the sea
Never twice sees the earth of grass before him.
I have also seen her Banalata Sen of Natore.
When day is done, no fall somewhere but of dews
Dips into the dusk; the smell of the sun is gone
Off the kestrel’s wings. Light is your wit now
Fanning fireflies that pitch the wide things around.
For Banalata Sen of Natore.
বাহ দারুণ ব্যাখা। আপনাকে ধইন্যা কারণ ধৈর্য নিয়ে এসব বই পড় হতো না, বনলতা সেন নিয়েএরকম ব্যখ্যাও কখনও জানা হতো না।
বইটাতে এর মধ্যে প্রকাশিত অন্যান্য ব্যাখ্যার সংক্ষিপ্ত একটা বিবরণ আছে। সেগুলোও ইন্টারেস্টিং।
ব্যাপক তো দেখি
ধইন্যা বস
আমি আকবর আলী খানের লেখা থেকেই প্রথম জানতে পারি যে, বনলতা সেন বারবনিতা। কিন্তু ব্যাপারটি আমার কাছে অস্পষ্ট। এটি কি তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যা না-কি এর কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে?
কবি যেহেতু সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি, সুতরাং সবার ব্যাখ্যাই তার তার নিজস্ব। তবে আকবর আলী খান প্রতিটি শব্দের আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। পুরোটা পরে ঠিক করা সম্ভব কতখানি নিবেন, কতটুকু নিবেন না।
বাব্বাহ .. বইটা পড়তে হবে
.. ইন্ট্রেস্টিং লাগছে
..
আমি এক পত্রিকায় পড়ছিলাম যে বনলতা সেন নাকি জীবনানন্দের এক বিধবা আত্মীয়া ছিলেন যিনি কিনা পাশেই থাকতেন, না যেন উপরের তলায় থাকতেন.... তাদের ভাষায় ঐ মহিলা ছিলেন ''আ লেইডি অব ইঝি ভার্চু ''... অহন যা বুঝার বুইঝা লন
...
একেকজন একেক কথা কয় বনলতা সেন রে নিয়া
.. বনলতার নামে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি 
পোস্টের লিগা ধন্যবাদ
আকবর আলী খান তো রীতিমত বনলতা সেনরে বারবনিতা বানাইছে। এটা তো কাদা ছোড়ার চাইতেও খারাপ। বড়ই কষ্ট পাইছি। দুদণ্ড শান্তির যে ব্যাখ্যা দিছেন তিনি সেইটা আর না কই।
বস, আপনার লুকোচুরি ভাবেসাবে তো মনে হইতাছে দুদণ্ড শান্তির যে ব্যাখ্যা তিনি দিছেন তা বেশ মারাত্মক ই অইবো.. তাই সে আলাপ আর আমরা না করি.. বাই দ্য ওয়ে, দুদন্ড আসলে কতখন
? 
বনলতা সেনরে নিয়া পৃথিবীর সেরা আলোচনাটা হয়ে গেছে এখানে
এরপর আর কোনো কথা নাই
সুলতা বনাম বনলতা সেন
একটি তুলনামূলক কাব্য বিশ্লেষণ
--ডঃ সৈয়দ এস আর কাশফি
কবি শফিকুল ইসলামের কবিতায় তার কাব্য প্রেয়সী সুলতার যে নান্দনিক ও শৈল্পিক সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় তা সামগ্রিক ও কাব্যময়। কবি জীবনানন্দ দাসের বনলতাসেনের মতো কোন খন্ড চিত্রকল্প নহে। বর্ণনা এখানে সফল, কাব্যময় এবং জীবন্ত। জীবনানন্দদাস বনলতা সেনের মুখশ্রী ও চুলে কাব্য সৌন্দর্য্য খোঁজে ফিরেছেন। যা নিতান্তই খন্ড চিত্র। যেমন তিনি বলেছেনঃ--
"চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য"...
এখানে বনলতা সেনের সফল সৌন্দর্য বর্ণনা আমরা খোঁজে পাইনা। প্রায় অন্ধকারের মত তার চুল দেখার ঝাপসা আকুতি ও কাল্পনিক শ্রাবস্তীর মতো তার মুখের আদল। অন্যপক্ষে সুলতা প্রসঙ্গে কবি শফিকুল ইসলামের কাব্যময় উচ্চারণঃ--
"সুলতা, তুমি আমার
বাগানের মধ্যে সদ্য প্রস্ফুটিত
তাজা গোলাপদেখার অনুভূতি।
.....................
সুলতা তুমি আমার আধার আকাশে
একটি চাঁদের মত
একটি নিটোল নিভাজ স্বপ্ন,
একটি সজীব কবিতা,
চির ঝংকৃত সুরে একটি ছন্দ দ্যোতনা,
শিল্পীর আকা যেন একটি জীবন্ত ছবি"...
[কবিতাঃ সুলতা তুমি আমার]
(শ্রাবণ দিনের কাব্য)
পাঠক মাত্রই জানেন সৌন্দর্য বর্ণনায় তাজা প্রস্ফুটিত গোলাপের উপমা একটি সফল উপমা। তাজা গোলাপ দেখার মতো রূপময় অনুভূতি পৃথিবীর আর কোন সুন্দর সৃষ্টিতে খুঁজে পাবেন না। একমাত্র প্রেয়সীর দৈহিক সৌন্দর্য ছাড়া। এখানে কবি শফিকুলের বর্ণনা তার কাব্য প্রেয়সী প্রস্ফুটিত তাজা গোলাপ দেখার অনুভূতি যা সুন্দরতম সুন্দর। তার মনে কাব্য প্রেয়সী সুলতা তুলনাহীনা অপরূপা ও সৌন্দর্য ময়তায় ভরপুর। কবির দৃষ্টিতে সুলতা তেমনি এক সুন্দরী প্রতিমা ।
জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনে সে রকম কোন জোরালো বর্ণনা আমরা খোঁজে পাই না। জীবনানন্দ দাস বনলতা সেনের মুখে দেখেছেন শ্রাবস্তীর কারুকার্য যা কাল্পনিক ও অনেকটাই পুরনো। অন্য পে কবি শফিকুল ইসলাম সুলতার মুখে এমন এক জ্যোতি দেখেছেন যা প্রাণের কাছাকাছি, ভালবাসা মাখা ও কালোত্তীর্ণ। সে জন্যেই সে জ্যোতির অনুপস্থিতিতে কবি হয়েছেন আর্ত, বিমর্ষ ও ক্লান্ত। জীবনানন্দ দাস বনলতা সেনের মুখশ্রী দেখে ক্ষনিকের জন্য আমোদিত হলেও তা ছিল নিতান্তই নিকের ভালবাসা। ভালবাসা নহে এবং প্রেম ও নহে। তাই সে মুখশ্রী দেখতে না পেলে কবির হৃদয়ের কি আকুতি বনলতা সেনে তা আমরা পাই না। কিন্তু কবি শফিকুল ইসলামের সফল কাব্য সুরঃ--
"সুলতা একদিন যে মুখে
এক অপার্থিব আলো দেখেছিলাম
যে আলোর মোহে
পতঙ্গ আগুনের উত্তাপ ভুলে গিয়ে
ঝাপিয়ে পড়ে প্রাণ দেয়।
সুলতা সেই মুখে আজ
এ কোন কালো মেঘের ছায়া।"
[কবিতা : সুলতা একদিন যে মুখে]
(শ্রাবণ দিনের কাব্য)
হেলেন বিশ্বের সুন্দরী শ্রেষ্ঠা। তার সৌন্দর্য দেখে ট্রয় নগরীর বৃদ্ধরাও অভিভুত হয়ে যেত। সে নারী মাত্র নয়। সে অমর দেবীর অবিকল প্রতিমূর্তি।। হেলেন কাম সৌন্দর্য ও ঔজ্জ্বল্যের প্রতীক। অন্যদিকে কবি শফিকুল ইসলামের সুলতা এক অপরূপা নারীর মূর্তির প্রতীক যিনি দেবী না হয়েও কবির মনে দেবীর আসনে অধিষ্ঠিতা। রক্ত মাংসের নারী হয়েও পূঁজার বিগ্রহ রূপে কবির মনকে করেছে আন্দোলিত। দিয়েছে প্রশান্তির অনাবিল ছোঁয়া। ক্ষণকালের জন্য নহে অনন্তকালের জন্য। তাই কবির সফল উচ্চারণঃ--
"তোমাকে বাদ দিলে
ভালো লাগার মত এই পৃথিবীতে
আমার আর কিছুই নেই"।
[কবিতা: সুলতা এই জীবনে]
(তবুও বৃষ্টি আসুক)
বনলতা সেনে কবি জীবনানন্দ দাস বনলতা সেনের অভাবের বিরহ যন্ত্রনার কোন সুর তোলেন নি। তার মানে বনলতা সেনকে ভালবাসেন বলে মনে হয় না যদিও আঁধারের সঙ্গিনী হিসেবে তার মনে পাওয়ার আকাঙ্খা অত্যন্ত প্রবল। এটাকে প্রেমের আকুতি বলা যায় না কিংবা ভালবাসার প্রার্থনাও বলা যায় না। এখানে কবি জীবনানন্দ দাসের চরম ব্যর্থতা।
কবি শফিকুল ইসলাম প্রেমের এক সফল কবি। তিনি অঝোর শ্রাবণ ধারায়, রিমঝিম বৃষ্টিতে, আলো আঁধারের কাব্যময় খেলায় ও চেতনার চন্দ্রিমায় তার কাব্য প্রেয়সী সুলতাকেই কি চান। তার কালোত্তীর্ণ সব কবিতাগুলোর পরতে পরতে, ছন্দে, উপমায় ও কাব্য অলংকারে সুলতার অপরূপ রূপের বর্ণনা প্রগাঢ় ও চিত্রময়। কবির মন সুলতাকে জগতের সকল উপমার উর্ধ্বে অন্য এক অনন্য উপমায় খুঁজে ফিরছেন। সেই জন্য দৃঢ় উচ্চারণঃ--
"তোমার উপমা শুধু তুমি
তুমি আছ সব সৌন্দর্যের মাঝখানে
সৌন্দর্যের রাণী হয়ে সগৌরবে মহিয়সী"
[কবিতা : সুলতা যখন তোমায় দেখি]
( শ্রাবণ দিনের কাব্য)
কবি পুর্নেন্দু পত্রী তার কাব্য-প্রেয়সী নন্দিনীর রূপে বিমোহিত হয়ে যেমন বলেছিলেনঃ--
"কেন্দ্রে আছ তোমাকেই
সূর্যরশ্মি আছে ঘিরে
নন্দিনী পুরনো হলে
পৃথিবী পাবে শ্বাশ্বতীরে।"
তেমনি কবি শফিকুল ইসলামের কাব্য প্রেয়সী সুলতা ও অনন্ত মাধুরীময়, অপরূপা ও কাব্য মাধুর্যমন্ডিত যা কখনই পূর্ণ হবার নয়, হয় না। কবির মনে সে চিরদিনই সুলতা, চির যৌবনা সুলতা, চিরকাব্যময় সুলতা, হৃদয়ের সুলতা, প্রাণের সুলতা ও স্বপ্নের সুলতা এক কথায় ভালবাসার সুলতা। যা কবির মনে চিরদিনই প্রেমের পরশ বুলিয়ে যাচ্ছে নিশিদিন। তাই কবির কাব্যময় উচ্চারণঃ--
"তোমার রূপের আলোয়
আমার বিশ্বভূবন উদ্ভাসিত--
তুমি ছাড়া আমার সবই অন্ধকার"।
[কবিতা : সুলতা যখন তোমায় দেখি]
( শ্রাবণ দিনের কাব্য)
অন্যদিকে কবি জীবনানন্দ দাস বনলতা সেনকে যদিও নাটোরে দেখেছেন বলে দাবি করেছেন তবু সে তার চোখে অপরূপা ও তুলনাহীনা নহে। বিদিশা নগরীর শ্রাবস্তীর মতন এক নগ্ন নারী যা কেবল কামার্তরাই অন্ধকারে আকাঙ্খা করে থাকেন। কবিও তাই বলেছেন-এই আকাঙ্খা কখনও কাব্যিক নয় এবং শিল্পমাধুর্য বর্জিত। ভালবাসা না পাওয়ার স্বস্তি তিনি বনলতা সেনের কাম আবেদনময়ী নগ্ন দেহে খুঁজে ফিরেছেন দুদন্ডের প্রশান্তির জন্য, দুদন্ডের স্পর্শের জন্য। কবি জীবনানন্দ দাস বলেছেনঃ--
"হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশিথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দণ্ড শান্তি দিয়েছিলো নাটোরের বনলতা সেন।"
[কবিতাঃ বনলতা সেন]
(বনলতা সেন ও মহাপৃথিবী)
পাঠক একটু মনযোগ দিয়ে খেয়াল করুন; কবি জীবনানন্দ দাস হাজার বছর ধরে সিংহল সমুদ্র থেকে মালয় সাগরে বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে পথ হেঁটেছেন কার জন্য? বনলতা সেনের জন্য? নাকি অন্য প্রেযসীর জন্য? যদি বনলতা সেনের জন্য হতো তাহলে সে তার অন্তরে চিরন্তন প্রেমের এক উজ্জ্বল উন্মাদনা ছড়িয়ে দিত যা হতো অনন্তকালের দু-দন্ডের জন্য নয়। কারণ যাকে এতটা পথ পাড়ি দিয়ে পেয়েছেন সে শুধু হবে দু-দন্ডের কামসঙ্গীনি কিংবা স্পর্শসঙ্গিনী অথবা শুধু সঙ্গিনী সে হতে পারে না। কারণ প্রগাঢ় ভালবাসায় যাকে পাওয়া যায় সে মনে চিরন্তন প্রেমের পরশ বুলিয়ে দেয় যা কোন প্রেমিক কখনই ভুলে যেতে পারে না। দু-দণ্ড কেন হাজার বছরে ও যা ভুলে যাবার নয়। সুতরাং একথা সু-স্পষ্ট যে বনলতা সেনকে তিনি কখনই খোঁজেন নাই। পথ হাঁটার ক্লান্তিম মুহুর্তে দু-দন্ডের শান্তির জন্য ণকালের সঙ্গিনী করেছিলেন। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় কিভাবে বনলতা সেন কালোত্তীর্ণ কবিতা। অন্তত কবির ভাষ্যে সে দু-দন্ডের কামসঙ্গিনী কিংবা ক্লান্তিময় পথে পড়ে থাকা দু-দন্ডের স্পর্শসঙ্গিনী।
অন্যদিকে কবি শফিকুল ইসলাম সাফ সাফ বলে দিয়েছেন তিনি সুলতাকেই খুঁজছেন, সুলতার কাছেই যাবেন এবং চিরতরে তার কাছেই থেকে যাবেন, এমনকি কোনদিনই তাকে ছেড়ে যাবেন না। প্রেমের সফল কালোত্তীর্ণ উচ্চারণ এর চেয়ে আর কি বা হতে পারে। তার প্রেমময় উচ্চারণঃ--
"সুলতা তোমার কাছে যাবো
বর্ষার খরস্রোতা ভরা নদী সাতরে
আমি তোমার কাছে যাবো
রৌদ্রদগ্ধ মরুভূমির তপ্ত ধু ধু বালিরাশি
নগ্নপদে পার হয়ে
তোমার কাছে যাবো।
..........................
সুলতা,সত্যি সত্যি দেখো একদিন
সব লোকলাজ দ্বিধাদ্বন্দ ছুড়ে ফেলে
আমি তোমার কাছেই চলে আসবো চিরতরে
হঠাৎ করে তোমাকে চমকে দিয়ে
তোমাকে ছেড়ে আর কোথাও
ফিরে যাব না, যাব না"
[কবিতা সুলতা তোমার কাছে যাব]
(শ্রাবণ দিনের কাব্য)
এবার আসা যাক বনলতা সেন ও সুলতা কাব্য চরিত্রের তুলনামূলক রূপক ও উপমার চারণভূমিতে। বনলতা সেনের উপমার বাগান বড় বেশী পুরনো ও ভয়াবহ। জীবনের উত্তাল ফেনায়িত হতাশায় কবি জীবনানন্দদাস বনলতা সেনকে দেখেছেন এবং সৌন্দর্যের রূপময় বর্ণনায় শুধুমাত্র চুল ও মুখশ্রীর কথা উল্লেখ করেছেন যা একটি অসম্পূর্ণ বর্ণনা ও নগ্ন যুগের উপমা। আধুনিক যুগের চেনাজানা কোন সফল উপমা নহে। যা আত্মস্থ করতে গেলে পাঠককে ইতিহাসের দূরতম কুয়াশার পথ হাঁটতে হবে যা সাধারণ পাঠকের পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষ এক শ্রেণীর পাঠক ছাড়া ঐসব দূর্বোধ্য উপমা কেউই বুঝতে সক্ষম হবেন না।
অন্যদিকে সুলতা প্রসঙ্গে কবি শফিকুল ইসলামের উপমার বুনন বড় বেশী কাব্যময়, সুন্দর, আধুনিক ও চির পরিচিত। কবি শফিকুল ইসলামের সুলতাকে খুঁজতে পাঠককে দূর অন্ধকারের বিদিশা নগরীতে যেতে হবে না। আমাদের চির পরিচিত চেনা শহরেই তার মায়াবী দৃষ্টির ছোঁয়া খুঁজে পাওয়া যাবে। কবিও তাকে তার চেনা শহরেই খুঁজে ফিরেছেন, পেয়েছেন। এই চেনা শহরেই দেখেছেন সুলতার ভাস্কর্যমন্ডিত পদচিহ্ন যা বৃষ্টি জলে মুছে গেলেও কবির হৃদয় থেকে মুছে যায়নি। এমনই এক প্রেমময়ী নারী সুলতা।
এবার আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নেব কাব্য চরিত্র সুলতা ও বনলতা সেন নারী চরিত্র হিসেবে কোনটি সফল সেই দিকে। জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেনের নারী চরিত্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ ও দু-দন্ডের স্পর্শসঙ্গিনী কিংবা কামসঙ্গিনী মাত্র। নারী চরিত্রের আর কোন বৈশিষ্ট্য আমরা বনলতা সেনে পাই না। সবই যেন ধূম্রজাল ও ক্ষণিকের জন্য। অন্যদিকে কবি শফিকুল ইসলামের সুলতা এক অনন্যা নারী মূর্তির প্রতীক। তাই তো কবির সাহসী উচ্চারণঃ--
"সুলতা, তোমার শাড়ীর আঁচল
আমার বিজয় পতাকা।
সুলতা, তোমার হৃদয় আমার স্বদেশ
সুলতা, তোমার মুখশ্রী আমার সংবিধান"।
[কবিতা: সুলতা এই শহরের]
(শ্রাবণ দিনের কাব্য)
এখানে কাব্যপ্রেয়সী সুলতা অপরূপা এক নারী মূর্তির রূপক যা কবিকে সারাণ অনুপ্রেরনা দেয় কর্মে, বিজয়ে ও চিন্তায়। কবি শফিকুল ইসলামের কাব্যপ্রেয়সী সুলতা এমনই এক সফল নারী যা কবির জীবনে সকল সময়ের স্বপ্ন, অহোরাত্রির আনন্দ ও জীবনভর প্রশান্তির ছোঁয়া। যাকে হারালে যেন কবির সব কিছুই হারিয়ে যাবে এমনকি বাঁচার আকুতিও। এখানে সুলতা চরিত্রের কাব্যিক সফলতা।
আমার পড়া সেরা আলোচনা
বনলতা সেন কে নিয়ে ড. আকবর আলী খানের ব্যাখ্যা আগে শুনেছিলাম এক টিভি সাক্ষাতকারে, পরে নেটে আপনার সাথে আলাপও হয়েছিল এটা নিয়ে । কিন্তু বই প্রকাশের ব্যাপার টা জানতাম না, ইংরেজি অনুবাদটাও নয় । ধইন্যা ।
~
বইটা এবার বই মেলায় বের হয়েছে। ইন্টারেস্টিং
অনুবাদটাওতো তো জটিল ... থ্যাংকস মাসুম ভাই
ইংরেজিটা মূল ধরে বাংলায় অনুবাদ করলে কী পুরোপুরি বনলতা সেন আসবে?
দারুণ! আকবর আলী খানের ভিউ তো সেইরকম জোস!
হ, খুবই ইন্টারেস্টিং ব্যাখ্যা। পুরোটা পড়ে দেখতে পারেন।
নাটোরে গিয়া ভদ্রমহিলারে অনেক খুঁজছি, কেউ তার হদিস দিতে পারলো না। আফসুস !!
এখন খুজছেন? আকবর আলী খান লিখছেন যে, উত্তরবঙ্গের সেরা বিনোদন কেন্দ্র ছিল সেই যুগে। এখন খুঁজলে কী হবে?
কখন কী খুঁজতে হয় তাও জানলেন না। আফসুস। 
কারে কি বলেন? ওনারাই তো এনারে খুঁজেন
~
খ্যাক খ্যাক , উপস আমি কিছু কইনাই ্য়াআযাদ্ভাই।
বইটা পড়েছি। ওনার ব্যাখ্যাগুলো বেশী ভালো লাগেনি, পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিলো যার যা কাজ তার সেটি করা উচিত। আপনার আলোচনা পড়ে মনে হচ্ছে আমি হয়তো বইটার গভীরে যেতে পারি নি। আবার পড়ে দেখবো।
ভাল লাগেনি সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আকবর আলী খানের কাজ এটা না এমন ব্যাখ্যা কেন?
ওনাকে আমার সাহিত্যের লোক মনে হয়নি।
তিনি তো সাহিত্য আলোচনা করেননি খুব একটা। আলাচনায় ইতিহাস ও আধ্যাত্ত্বিকতা আছে প্রবল ভাবে
'কবিতা' যদি সাহিত্যের একটি প্রধাণ শাখা হয় তবে বনলতা সেন এর আলোচনা বা ব্যবচ্ছেদ তো সাহিত্যেরই আলোচনা। এটিকে যদি প্রবন্ধ হিসেবে দেখি তাহলে আপনার কথানুসারে এখানে ইতিহাস ও আধ্যাত্ত্বিকতার মানদন্ডে বনলতা সেনের মূল্যায়ণ হয়েছে। বইটি পড়ার পর আকবর আলি খানকে একটি প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করেছে (ধৃষ্টতা না হলে), তিনি হঠাৎ করে কেন জীবনানন্দ দাসের চারিত্রিক ত্রুটি বিশ্লেষণ বা স্খলন নিয়ে এত আগ্রহী হলেন?
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি সে কী মোর অপরাধ-এই লাইনের মধ্যে তেমন কোনো রহস্য নেই। এই লাইনের সাহিত্যমূল্য নিয়ে সাহিত্যিক আলোচনা হতে পারে। কিন্তু বিদিশার নিশা, শ্রাবস্তির কারুকার্য, বিম্বিসার ধূসর জগত-এই কথাগুলোর আলোচনা কেবল সাহিত্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা সম্ভবত যাবে না।
আর আকবর আলী খান এখানে কবির চরিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে তো আলোচনা করেননি। তিনি তার ডায়েরির রেফারেন্স দিয়েছেন মাত্র। আর বনলতা সেনের আমি কবি কীনা সে আলোচনাও করা হয়েছে।
ড. খান কেবল কবিতাটির শব্দ ধরে ধরে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আর কিছু না। আর সবাই যে তা মানবেন তাও না।
বনলতা সেন নিয়ে গবেষণার শেষ হবে না। তবে আমি জানতাম আকবর আলী খানের বইয়ের নাম পরার্থপরতার অর্থনীতি।
বনলতা সেন নিয়ে এই ব্লগটা দারুণ। আগ্রহীরা দেখতে পারেন.
পরার্থপরতার অর্থনীতিতে মাত্র একটা প্যারা আছে বনলতা সেন নিয়ে। নতুন বইয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।
বাহ নতুন কিছু জানলাম, বনলতার এই পরিচয় জানা ছিলো না!!!
হুম। বনলতার এই পরিচয় হয়তো অনেকেই মানবেন না।
ধইন্য, দারুন হইছে। আসলে এতোদিন যেগুলো জানতামনা, আজ তার সবটাই জানলাম।
বনলতা সেন নিয়ে আকবর আলী খান চূড়ান্ত কিছু বলেননি। এটা নিয়ে আরও অনেক ব্যাখ্যা হবে এটা ধরে নেওয়া যায়।
নাটোরের কাঁচা গোল্লার কথা মনে আছে।
অপূর্ব অসোম, লাইক লাইক লাইক
বস আপনার লেখাটা পড়লাম। মন্তব্যের লিন্কগুলো পড়া হয়নি, সময় করে পড়বো। তাই প্রিয়তে রাখলাম।
বনলতা সেন। ব্যাখ্যাটা খুব সুন্দর। বনলতা প্রেমিকার উপমা ,কবি তো প্রেমিকদের অনুপ্রেরনা ও আদর্শ এবং কবিতাটি শ্রেষ্ঠ প্রেমের কবিতা।
আমি কোন আমলেই নাটোর যাই নাই
দর্কার কী? আপ্নার্ওতো মটর্সাইকেল আছে।
তবে চিরকুট ভুল করে পকেটে ঢুকায়েন্না।
আমি তো দোনোজনকেই ভালবাসি।
ব্যারাছেরা লাগতাছে বস।
নতুন জানলামা বইটা পড়ার ইচ্ছা হলো।
মন্তব্য করুন