পিনোমাইসিন-১
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তাঁর যমুনা তীরের কাচারি বাড়ীর দোতলায় একটি আরাম কেদারায় অলস ভঙ্গিতে বসে আছেন। একটু নজর করে দেখলেই বুঝা যায় তিনি যমুনার জলের দিকে চেয়ে কোন গভীর চিন্তায় নিমগ্ন হয়ে আছেন। এমন গম্ভীর সময়ে আরাম কেদারার হাতলে রাখা তাঁর মোবাইলখানা বেরসিকের মত বারবার বেজে উঠছে আবার প্রায় সাথে-সাথেই নিস্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে। কবিগুরুর ভাবনায় ঘনঘন ছেদ পড়ায় কপালের রেখাগুলো বিরক্তির সাথে প্রকট হয়ে ফুটে উঠছে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোবাইলখানা হাতে নিয়ে দেখলেন লালন ফকিরের আটটা মিসকল। কবিগুরু কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে লালনকে কল ব্যাক করলেন।
ফোন রিসিভ করেই লালন সুধালেন "পেন্নাম হই ঠাকুর মশাই, শরীর স্বাস্থ্য ভালোতো?"
এহেন নির্দোষ প্রশ্নের উত্তরে কবিগুরু খেঁকিয়ে উঠে বললেন "সময় গময় নাই এইরূপ উথাল-পাথল মিসকল দেয়ার হেতু কি লালন?"
লালন কিঞ্চিৎ বিব্রত কণ্ঠে উত্তর দিলেন "আজ্ঞে, ফকির মিসকিন মানুষ, মোবাইলে ব্যালেন্স নাই। ভাবলাম অনেকদিন খোঁজখবর নাই তাই একটু ভালোমন্দ খবর নেয়ার চেষ্টা নিলাম"
কবিগুরু বিরক্তির সাথে বললেন "দেশে দারিদ্র সঙ্কট প্রকট হইতেছে বোধ করি, নগন্য টকটাইমও ক্রয় সীমার বাইরে চইল্যা যাইতেছে। ক'দিন আগে গভীর রজনীতে ঠাকরুনের মুড বানাইতে চেষ্টা নিতেছিলাম আর এমন সময় অচেনা নাম্বার হইতে মুহুর্মুহু মিসকল আসতে লাগল। কল ব্যাক করে দেখি এক গো-শাবক হাম্বা হাম্বা করতেছে। আফসোস, দেশে গরু ছাগলের হাতেও মোবাইল পৌঁছে গেছে, যাদের প্রধান কাজই হলো মধ্যরাতে প্রেমালু মুড বিগরাইয়া দেওয়া। আর ঐদিকে ঠাকরুন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে শুয়ে থাকে, গায়ে হাত দিলেই ছ্যাত করে উঠে বলে; বুইড়া মিনসে! কঁচি ছুড়িদের সাথে মোবাইলে প্রেমালাপ করে মন ভরাও গিয়ে, খবরদার গায়ে হাত দিবা না।" কবিগুরু একটা নাতিদীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে আনমনে বলে উঠেন "আফসোস….."
কবিগুরুর আলোচনা শয়ন কক্ষের দিকে ধাবিত হচ্ছে দেখে প্রসঙ্গ পাল্টাতে লালন বলেন "ওই সব গরু-ছাগলের কর্মকান্ডে মন খারাপ করার কোন আবশ্যকতা দেখি না। তা এক্ষণে কি করতেছিলেন? নয়া কোন গান বাঁধতেছিলেন বুঝি?"
কবিগুরু নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে উত্তর করলেন " না! আসলে একটা গানের কথা নিয়া ভাবতেছিলাম। গতরাতে আষাঢ়ে টিভিতে জনৈক হুমায়ুন আহমেদ নামক লেখকের রচিত একখানা নাটক দেখলাম। নাটকের একখানা গান নিয়া বড়ই বিচলিত বোধ করতেছি। গানের লিরিক হলোঃ যমুনার জল দেখতে কালো, চান করিতে লাগে ভালো। যৌবন মিশিয়া গেল জলে"
লালন কিছুটা রাগান্বিত হয়ে বললেন "হারামজাদা-টা ইদানিং অত্যধিক পরিমানে গঞ্জিকা সেবন করতেছে বোধ করি। নইলে এইরূপ অশ্লীল গান কেন রচনা করে? দেহ তত্ত্বের খবর জানেনা যৌবন লইয়া ডুব সাতার! ফাজিল কাহাকা"
কবিগুরু সত্তর লালনকে সুধরে দিয়ে বলেন "না না, আমি ভাবতেছি সে যমুনার জল দেখতে কালো কেন বলল? জ্ঞান হবার পর থেকে জমুনার জল ঘোলা-ই দেখে আসতেছি। তাঁর মনে হয় বর্ণান্ধতা আছে, তাই সে ঘোলাকে কালো দেখে তাহাই প্রচার করতেছে।"
লালন গলার স্বর স্বাভাবিক করে উত্তর করলেন "আরে না, শুনছি সে কি সব এল.এস.ডি ফেলেসডি নিয়া লেখে। ওই সব ছাইপাশ গ্রহন করলে নাকি বর্ণ বিভ্রাট ঘটে। বোধকরি কোন বস্তির চিপায় গিয়া ওই সব ছাই পাশ খাইয়া গান লেখছে।"
কবি গুরু গম্ভীর কণ্ঠে বলেন "হুম! বড়ই চিন্তার বিষয়!"
লালন আবারো প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলেন "বাদ দেন ওইসব উজবুকি গান ফান। শুনছি ঢাকায় নাকি বিশ্বকাপের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হইছে। আমি' ফকির মিসকীন মানুষ, টিভি কেনার সামর্থ নাই। আপনি অনুষ্ঠানটা মিস করেন নাই বোধ করি। তা অনুষ্ঠানে কি দেখাইলো?"
কবিগুরু কিঞ্চিত উৎসাহের সহিত নড়ে চড়ে বসে জানাতে লাগলেন "অনুষ্ঠান খুবই আলোকিত হইছে। আলোকচ্ছটায় আঁখি ঝলসে যাবার যোগাড়। তন্মধ্যে আমাদের মমতাজ বেগম দেখিলাম পোলাদের সহিত আগুনের গোলা লইয়া খেলায় মেতেছে। কলিকাল বুঝলে? ঘোর কলি। আর শেষের দিকে কতিপয় উশৃঙ্খল বালক কাকে জানি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মারার জন্য লাঠিসোটা নিয়া তর্জন গর্জন করতেছিল। কিন্তু যুবকগুলোর পেছনে কতিপয় বালিকা সানন্দে লম্ফঝম্ফ করতেছিল। আহা! বড়ই সৌন্দর্য্য! বড়ই সৌন্দর্য্য!"
লালন বিড়বিড় করে কিছু একটা বলল যা কবিগুরু ঠাহর করতে ব্যর্থ হয়ে শুধালো "কোন বুইড়ার ভিমরতির কথা বললেন বুঝি নাই?"
লালন গলা খাকড়ি দিয়ে বললেন "না মানে, ভালয় ভালয়-ই অনুষ্ঠান শেষ হইছে তৈলে? কি করতে কি করে এইটা নিয়া ব্যাপক চিন্তিত বোধ করতেছিলাম, বাঙ্গালীর উপ্রে ভরসা করা কঠিন, আপ্নেইতো বলতেন; রেখেছো মা বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি"
কবিগুরু কিঞ্চিত ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলেন "ঘটনা একটা ঘটেছে বৈকি! রুনা লায়লা নাম্নী এক বেতাছিরা আওরাত বাঙ্গালী হইয়াও বিশ্ব দরবারে পাকী গান পরিবেশন করেছে। মেরী লাল হইছে তাতে কি? উর্দুতে ও লাল মেরী ও লাল মেরী করার কি আছে? আরে বাংলায় বল মেরী লাল হইছে মেরী লাল হইছে। না লায়েক জেনানা কাহাকা!"
লালন হতাস কণ্ঠে জানালেন "সবই পাকী প্রেম বুঝলেন, সবই পাকী প্রেম। এই প্রেম বড্ড কঠিন জিনিস"
কবিগুরু কিঞ্চিত ব্যথাতুর কণ্ঠে বলেলেন " ঠিকই বলছেন, প্রেম বড্ড কঠিন জিনিস। সেদিন প্রত্যুষে একটু বেলা করে নিদ্রাপাট করে বিছানা ত্যাগ করলাম। বসন্তের কোকিলের ডাক শুনে মনে প্রেম খেলা করতেছিল। ভাবলাম এমন প্রেম ঘন সকালে ঠাকুরাইনের সাথে একটু আহ্লাদী করা যায়। খোঁজ করে দেখি ঠাকুরাইন রন্ধনশালায় রুটি বেলতেছে। প্রেম নেত্রে ঠাকরাইনের কোমর জড়িয়ে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে শুধালাম; তোমরা যে বল দিবস রজনী/ ভালবাসা ভালবাসা/ সখী ভালবাসা কারে কয়? আর অমনি ঠাকুরাইন এক ঝটকায় আমাকে দূরে ঠেলিয়া বেলুন নিয়া তাড়া করিয়া চেচাইতে লাগল, বুইড়া মিনসের রস কত? সাত সকালে বাসি হাতে ছুঁয়ে দিয়ে বলে ভালোবাসা কারে কয়? খাড়াও তোমারে দেখাইতেছি ভালোবাসা কারে কয়! .........আফসোস, বয়সের কারণে পালাইতে গিয়াও শেষ রক্ষা করতে ব্যর্থ হলাম।
আরো একটি নাতিদীর্ঘ শ্বাস ত্যাগ করে কবিগুরু আনমনে আপন স্কন্ধে হাত বুলাইতে বুলাইতে আবারো বলে উঠলেন "প্রেম ভালোবাসা বড়ই শক্ত জিনিস! বড়ই শক্ত জিনিস।"
ডিস্ক্লেইমারঃ স্বভাবজাত আলস্যের কারণে অন্যসব সিরিজের মত এইটাও প্রথম পর্বে মৃত্যু বরণ করবে বলেই আশায় বুক বান্ধি। সাধু, চলিত ও গলিত কোন ভাষার উপ্রেই বিশেষ দখল না থাকায় এই খিচুড়ি মার্কা রম্য কারো জিভে তিক্ততার জন্ম দিলে অপারগতা ক্ষম ক্ষম।
এইটা কি আম্রার মুরুব্বী? আরে সবার আগে মন্তব্যটা করবো বলে না পইড়াই আর কি
কিরাম আছেন গো ভাই? দাঁড়ান এইবার 
হুম, ঠিক ধরছেন। আমি ভালই আছি।
আপ্নে কিরাম আছেন ভাইডী?
ফকির মিসকিন লুক হিসেবে খ্রাপ নাই গো ভাই! ভালু আছি
কাজি ভাই লালন কবিগুরুর নাম্বার পায়।কিন্তু আমরা নালায়েক রা বনলতা সেনের নাম্বার পাইনা।
কাজীদা'

ডিসক্লেইমার ভাল্লাগসে। পর্ব আসলে আসুক, না আসলে নাই। কোনো চাপ নাই।
সাধু-চলিত সব মিশেছে তো কি হয়েছে? ব্লগে কি রাবীন্দ্রিক সাহিত্য ছাড়া আর কোনোকিছুর চর্চা হবে না?
সবশেষে বলি, লেখা অতি উমদা হয়েছে। রুনা লায়লার অপকীর্তি ক্ষমার অযোগ্য। আর মমতাজ তো খালি এমপি কেন, প্রধানমন্ত্রী হলেও নান্টু ঘটকের কথা ফেলতে পারবে না। অল্প বয়সে আগুনের গোলা দেখে গান বাঁধবেই
কাজীদা আরেকবার রিডিং দিয়ে যততূকু পারেন সাধু-চলিত ঠিক করে দেন। রুনা লায়লারে গুনে গুনে একশোটা কানমলা দেয়া উচিত। আর মমতাজ আপার আগুনের গুলা দেইখাতো দেখলাম আমাগো পুরান গুলা (আশারফুল) গলা মিলাইতেছে।
ও লেখা ভালো লাগছে।
চরম, জব্বর, কঠিন।
চরম, জব্বর, কঠিন
হা হা প গে
:bigsmile: চরম, জব্বর, কঠিন 8)
যদ্দুর জানি ও মেরি লাল গানটা পাকিস্তান আমলের গান এবং রুনা লায়লা একাত্তরে পাকিস্তানী সৈন্যদের মনোরঞ্জনের জন্যও এই গান গেয়েছিল বলে শুনেছি। সেই গান এত বছর পরে বাংলাদেশের মাটিতে বিশ্বকাপ মঞ্চে গেয়ে বিশ্বকাপের অনুষ্ঠানকে কসমোপলিটন মর্যাদা দিতে চেয়েছে নাকি পাকিদের সন্তুষ্ট করতে চেয়েছে, বিসিবির কাছেই সম্ভবতঃ পরিষ্কার নয়।
একটা প্রশ্ন জাগে, রুনা লায়লা কি সেদিন ষাট দশকের অখন্ড পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছিল?
হাহাপগে। সেল নং পেলে ভালই হতো।
বিলম্বে হইলেও আমাদের জন্য লিখিবেন। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করিব।
নানান জটিলতার মাঝে হাসির খোরাক পেতে মন চায়। ভালো থাকুন।
মন্তব্য করুন